নারী ও নারীত্ব এবং বন্ধ্যাত্বের সমাজ-মারুনা রাহী রিমি


জেল খেটেছেন কখনও? বা কখনও সরেজমিনে গিয়ে জেলে থাকা আসামীদের জীবনযাপন দেখেছেন? বিশ্বাস করুন, এমন করুণ ও নিষ্ঠুরতম জীবনযাপন আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। নিশ্চিতভাবে মায়া হবে, চোখে জল আসবে জেল খাটা বা ফাঁসির সাজা পাওয়া আসামীদের কষ্ট দেখে। কিন্তু কি জানেন, সেই সব আসামীদের যেসব কারনে জেল খাটতে হয়, সেসব কারণ তাদের এই মানবেতর জীবনযাপন থেকেও আরও বেশি মারাত্মক যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
একবার ভেবে দেখুন এসিডদগ্ধ মেয়েটার কথা, যে কিনা দিনরাত জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি এমন কষ্ট ভোগ করে যাচ্ছে, যা আমাদের সাধারন মানুষের কল্পনা করাও অসম্ভব। দূর থেকে অনেক কিছুই বলতে পারে। কিন্তু বুঝতে পারা কারোরই সম্ভব না। মেয়েটার কষ্টের তুলনায় কি এসিড নিক্ষেপ এর আসামীর শাস্তি বা জরিমানা খুব বেশি? হয়তো সেই আসামীর ৫/১০ বছরের সাজা হলো, লাখ টাকা জরিমানা হলো, জেল খাটতে গিয়ে খাবার, পানি, কাজ, কষ্ট ইত্যাদিতে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো, জমিজমা, বাড়ি বেচে লাখ খরচ হল। তার মানবেতর পরিনামে অনেকেরই মায়া হতে পারে। কিন্তু মেয়েটার? ঘা একদিন হয়তো শুকিয়ে যাবে। একের পর এক সার্জারী হবে, লাখ লাখ টাকা যাবে, আর সে ফিরে পাবে না তার আগের মত সুন্দর ও স্বাভাবিক চেহারা, সাধারন কেউ ই বিয়ে করতে চাইবে না তাকে, আয়নায় নিজেকে দেখতে পারবে না।
লোকে দেখলেও ভয় পাবে, ঘৃণা করবে। তার পুরোটা জীবনই শেষ হয়ে যায়। সে তুলনায় কি আসামীর শাস্তি আসলে কিছু? এবার ভেবে বলুন তো, আপনাদের কেউ এসে সেই আসামীর মানবেতর জীবন দেখে মায়া করে মেয়েটাকে বললেন মাফ করে দিতে, কেস তুলে নিয়ে মুক্তি দিতে বা আরও বেশি কিছু দেখিয়ে বললেন-তার জরিমানা মাফ করে দিতে বা তাকে সহানুভূতি দেখিয়ে আসতে। কল্পনা করে দেখুন তো মেয়েটার জায়গায় দাঁড়িয়ে সেটা কি সম্ভব? আমরা বাস্তবেও আমাদের পরিচিত বা পরিবারের কাউকে বা আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের এমনই কোন উদ্ভট বা অসম্ভব কিছু জ্ঞান দিয়ে বেড়াই সমাজের দোহায় দিয়ে, সম্মানের দোহায় দিয়ে। মোটকথা এটাই তাদের অভ্যাস, জ্ঞান দেয়া।
(চলবে)