ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়েছিল সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে


এজি লাভলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
‘আমি আকুতি মিনতি করি। আলাহর কসম দেই। সন্তানের কসম দেই। প্রাণ ভিক্ষা চাই তাদের কাছে। এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না। তারা আমাকে বারবার কালেমা পড়তে বলছিলেন। এ সময় আরডিসি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।’ অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ক্রসফায়ার করা হবে বলে জানানো হলে এমন আকুতির কথা জানিয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান। পরে তাকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতনসহ তার ভিডিও ধারণ করা হয়।
আরিফুল ইসলাম আরও জানান, চোখ বাঁধা অবস্থায় তার কাছ থেকে জোর করে ৪টি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরে তাড়াহুড়ো করে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার আঘাতের চিহ্ন আমার শরীরে আছে।
জামিনের আবেদন করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি হাসপাতালে আসার পূর্ব পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তা আমার অসম্মতিতে হয়েছে। আমাকে ফোর্স করে করানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বেডে থাকা অবস্থায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানান আরিফুল ইসলাম রিগ্যান।
বর্তমানে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম কুড়িগ্রাম সদও হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত¡াবধানে রয়েছেন।
রবিবার (১৫ মার্চ) সকালে রিগ্যানের জামিন নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। কিভাবে তার জামিন হলো এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান পরিবারের সদস্যরা। জামিনের কথা শুনে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে পূর্ব নির্ধারিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি ফেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ছুটে যান সাংবাদিকরা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন সকাল সাড়ে ১০টায় সাংবাদিক আরিফুলের জামিন হয়েছে।
এ ব্যাপারে আরিফুলের পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আরিফুলের সম্মতিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তিনি জামিনের জন্য আবেদন করেন। তার জামিন আপিল অনুমোদনের পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজাউদ্দৌলার আদালতে জামিন আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন এবং আরিফুল ইসলামে পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন ও প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু। আপিল শুনানি শেষে ২৫ হাজার টাকার বন্ডে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলুর জিম্মায় আরিফুল ইসলামকে জামিন দেওয়া হয় বলে জানা যায়।
গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে ফিল্মি কায়দায় আরিফুলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বেধড়কভাবে পেটাতে পেটাতে ও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে শেষে জেলা প্রশাসক অফিসে তাকে নেওয়া হয়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের জেল দেওয়া হয়।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জামিন শুনানির পর দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান।
জামিনের বিরোধিতা করে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বোন রিমা জানান, আমরা কোনো কাগজে স্বাক্ষর করিনি, আপিলও করিনি। আমরা সম্পূর্ণ বিষয়টি তার অফিসের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। অফিসের লোকজনের পরামর্শে আমাদের আপিল করার কথা ছিল।
একই কথা জানালেন রিগ্যানের মামা নবিদুল। তিনি জানান, আমরা ডিসি অফিসে এসেছি নথিপত্র তোলার জন্য। কিন্তু এসে জানতে পারলাম তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা করেছে আমাদের জানা নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে জামিন চাওয়া হয়নি।
চলমান এ ঘটনায় জনপ্রশাসন বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন কুড়িগ্রামে কমর্রত সাংবাদিকদের ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানিয়ে দুপুর ২টায় জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সেটি পর্যালোচনা করে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার কোনো অন্যায়ের পক্ষে থাকবে না।
এ দিকে সাংবাদিক আরিফুলের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদের খবর পাওয়া গেছে।