3:53 PM, 3 July, 2025

সংবিধান রক্ষায় পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের রায় কতটা যুক্তিযুক্ত

imran-khan_11

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা ভোট খারিজ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরোধী বলেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্ট ডা. আরিফ আলভির সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিয়ে জাতীয় পরিষদকে পুনর্বহালের রায় দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক ডনের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে দেশের শীর্ষ আদালত সংবিধান রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন।

আশা করা যায়, বিশৃঙ্খলার অতলে ধাবিত হওয়া দেশকে এই রায় তলানি থেকে টেনে তুলতে পারবে। আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া এত দ্রুত পরিস্থিতি সামলে ওঠার কথা অনেকেই ভাবতে পারছিলেন না। একরোখা জেদ পেয়ে বসেছিল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। এতে পাকিস্তানের পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রহসনে রূপ নেয়। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র পছন্দের বিষয়; জবরদস্তির নয়।

ডন বলছে, ইমরান খানের সামনে রাজনৈতিক বিকল্প ছিল। তিনি মর্যাদার সঙ্গে রাজনৈতিক বাস্তবতার কাছে নত হতে পারতেন। এরপর নিজের রাজনৈতিক শক্তিকে লাগাতে পারতেন পরবর্তী নির্বাচনের কাজে। কিন্তু ইমরান খান একগুঁয়েমি দেখিয়েছেন।

সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদের অজুহাতে পার্লামেন্টারি প্রক্রিয়াকে বাতিল করে দিতে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সিদ্ধান্ত ইতিহাসের এক লজ্জাজনক পাদটিকা হয়ে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে, সুপ্রিম কোর্টের সহানুভূতিহীন দৃষ্টিভঙ্গির পর পিটিআই নিজেদের তৎপরতার ভূতপূর্ব পর্যালোচনা করবে। পাশাপাশি নিজের প্রতিই প্রশ্ন রাখবে, দলটি যখন নিজের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে অন্যদের দিকে ন্যূনতম ভ্রূক্ষেপ না করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন তারা সংবিধানের প্রতি যথেষ্ট অনুগত ছিল কি না।

ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে গেছে। ডলার-রুপির বিনিময় হারও এক চরম অনিশ্চয়তায় ডুব দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রীয় সম্পর্ককে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন ইমরান খান। নিজের এই দাবি নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি।

তবে সুপ্রিম কোর্ট নিজস্ব পথ ধরেই এগিয়েছেন, যা প্রশংসার দাবি রাখে। যদিও ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটির’ সুর তুলে সবকিছু আড়াল করে দেওয়ার সুযোগ আদালতের সামনে ছিল। স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনার অযুহাতে অসাংবিধানিক কিংবা আইনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া বোঝাতে ডকট্রিন অব নেসেসিটি ব্যবহার হয়ে আসছে। এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন রায়ের প্রত্যাশা নিয়ে কিছুটা নৈরাশ্য নিয়ে এসেছিল অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি অনুমোদন কিংবা আধা-অনুমোদনের এক কালো ইতিহাস। পাকিস্তানে এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন বিচারিক ইতিহাস আছে।

কিন্তু বর্তমান প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চ ভবিষ্যতের জন্য নতুন আশার আলো ছড়িয়েছেন। জাতীয় পরিষদকে পুনর্বহালের পাশাপাশি দেশের ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতাও পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষকে ফিরিয়ে দিয়েছেন আদালত।

আদালতে পরাজয় মেনে নিয়ে সংবিধানের প্রতি অটল থাকাই হবে পিটিআইয়ের জন্য বিচক্ষণতা। যৌক্তিক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থেকে তারা প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারে। এরপরেও তারা যদি সম্মানজনকভাবে ক্ষমতা ছাড়ার কোনো পথ খুঁজে না পায়, তবে সেই দোষ নিজেদের কাঁধেই চাপাতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *