2:10 AM, 15 July, 2025

বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে আজকের বাঙালিদের অনেক শেখার আছে

Screenshot_20210813-075821_Facebook

বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অকাল মৃত্যু না হলে এই উপমহাদেশে রাজনীতির ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতো বলে মনে করেন ভারতের যুব নেতারা। বুধবার (১১ আগস্ট) রাতে এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব নেতারা মন্তব্য করেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান কেবল বঙ্গের বন্ধু নন, তিনি ভারতেরও বন্ধু। এই উপমহাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেন।

 

 

বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কেন্দ্র (সিবিআইআর) বুধবার (১১ আগস্ট) রাতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

 

সিবিআইআর’র পরিচালক ও সাংবাদিক শাহিদুল হাসান খোকনের সঞ্চালনায় অনলাইন আলোচনায় অংশ নেন ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বর্তমান প্রজন্মের যুব নেতারা। আয়োজক সংস্থার গবেষণা বিভাগ কর্তৃক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরে ভারতের যুব নেতারা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন এবং কর্মের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তরুণ ছাত্রনেতা হতে মুজিব কিভাবে বাঙালির বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন, সেই বিষয়ে আলোকপাত করেন তরুণ রাজনীতিকরা।

 

 

আলোচনায় অংশ নিয়ে ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) যুব মোর্চার প্রাক্তন জাতীয় সম্পাদক ও বর্তমান মুখপাত্র সৌরভ শিকদার বলেন, ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বতঃস্ফূর্ত জননেতা হতে পেরেছিলেন এবং সর্বসাধারণ একাগ্রচিত্তে তাকে নেতা হিসাবে মেনে নিয়েছিল।’

 

 

তিনি বলেন, ‘ জন্ম পরিচয় ছাড়া যেমন কারো পরিচয় হয় না; তেমনি বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে আলোচনার কোনো মানে হয় না। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ।’

 

 

সৌরভ সিকদার আরও উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি তিনি ১৯৬৯ সালে পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে মানুষ আগে থেকেই নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান’র জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণে বাঙালি জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর উপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি নজরুল ইসলাম’র একটা বিরাট প্রভাব ছিল। তাই কবিগুরুর লেখা “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি” গান তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে আজকের বাঙালিদের অনেক শেখার আছে।

 

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ যুব কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক শ্রেয়া হালদার আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একথা বলতে হয় যে, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা ছিল, ধর্ম নিরপেক্ষতা, তার সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা, এবং তার মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ যেটাকে মুজিববাদ বলে আমরা জানি। সেই জায়গাটা সকল বাঙালি জাতিকে উৎসাহিত করে। তার যে চিন্তা-ভাবনা ছিল সেগুলো আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে লালন ও অনুসরণ করা উচিৎ। কেননা সেই চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই আমরা সামাজিক সহাবস্থান, সামাজিক সঙ্গতি, সামাজিক একতাবোধ আমাদের ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। বাংলাদেশের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম একেবারেই পরিপূরক।

 

আলোচনায় যুক্ত হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত পেশাজীবী যুবনেতা বিজন সরকার বলেন, একটা তর্জনী উঠিয়ে বাঙালি জাতিকে যিনি জাগ্রত করেছিলেন, বাঙালি জাতিকে নিয়ে যিনি বিশ্বের দরবারে ইতিহাসের পাতায় স্থান দেবে এই ভাবনা থেকে মানুষকে যিনি একত্রিত করতেন, লাখ লাখ মানুষ যার ডাকে সাড়া দিতেন, তিনি সবার প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে কাঁটাতারের বেড়া ভারতের সঙ্গে তৎকালীন পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশকে বিভেদ করেছিল। শুধু একটা কাঁটাতার ভারত আর আজকের বাংলাদেশ’র ভৌগোলিক ভাগ হতে পারে, কিন্তু আমরা বিশ্ব বাংলায় একাত্মবোধ অনুভব করি বাংলাদেশের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু শুধু নেতৃত্ব দেয়নি, স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। আর এই স্বাধীনতায় বন্ধু দেশ হিসেবে পাশে ছিল ভারত ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তাই ভারত আর বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সারা জীবন অটুট থাকবে।

 

ভারতের তফশিল ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি মৃত্যুঞ্জয় মল্লিক আলোচনায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছে, এটা গোটা পৃথিবীতে বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের বিষয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সাংবিধানিক কাঠামো এবং সেখানকার যে নীতিমালা, তার সঙ্গে অনেকাংশে মিল আছে। ভারতের আদলে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নামকরণও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করেছেন। সংবিধানে সব ধর্মের, বর্ণের, লিঙ্গের মানুষের অধিকার সমানভাবে দেয়া হয়েছে এবং ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তিনি তুলে ধরেছিলেন। ফলে ভারত-বাংলাদেশের সাংবিধানিক মিলটাই আমাদের নাড়ির আরেকটা বন্ধন।

 

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা থেকে ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির যুবনেতা চন্দন দেবনাথ বলেন, যদিও বঙ্গবন্ধুর নামের আগে বঙ্গ কথাটি যুক্ত তবুও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নয়, ভারতেরও বন্ধু। দুই দেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও বেশি চর্চা হওয়া উচিত দাবি করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রতিটা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে শিক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন সব দেশের নেতাদের চর্চা করা উচিৎ।

 

‘ভারতের তরুণ রাজনীতিকদের চোখে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক এই ওয়েবিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন-সিবিআইআর’র গবেষক আশরাফুল ইসলাম। প্রবন্ধে রাজনীতির ঐতিহাসিক পরম্পরার কথা তুলে ধরে তিনি সমকালীন রাজনীতির মাঠে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেয়ার ওপর জোর দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *