শবে বরাত : করণীয় ও বর্জনীয়


শবে বরাত : করণীয় ও বর্জনীয়
হাফেজ মাওলানা মুফতি সাহিদুল ইসলাম
রহমানী লাইলাতুল বরাত মুসলমানদের জন্য একটি ফজীলতপূর্ণ রাত। হাদীসের একে বলা হয়েছে “লাইলাতু নিসফে শাবান” অর্থ্যাৎ শাবান মাসের মধ্য রজনী। উপমহাদেশে এই রাতকে “শবে বরাত” বলা হয়। শবে বরাত হলো গুনাহ মাফের রজনী। শব শব্দের অর্থ রাত, ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ মুক্তি। অর্থাৎ শবে বরাত মুক্তির রাত, গুনাহ মাফের রজনী। আল্লাহ শবে বারআতে বান্দার গুনাহ মাফ করেন, এটা সত্য। এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে শবে বরাত নিয়েও আমাদের সমাজ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়িতে লিপ্ত। সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ পূণ্যময় রজনীকে এমনভাবে উদযাপন করে, যা সম্পূর্ণ ইসলাম বহির্ভূত। তারা এই পবিত্র রাতে এমন সব কাজ-কর্ম করে যা সুস্পষ্ট বিদআত ও নাজায়েজ। অপর একটি শ্রেণীর মানুষ এ রাতের ফজিলতকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রচার করে নিজেরা যেমন নফল ইবাদত থেকে দুরে থাকেন, অপরকেও ইবাদতের প্রতি দূরে রাখার চেষ্টায় থাকেন। এই বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি ইসলাম সমর্থন করে না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে হারিয়ে ফেললাম (বিছানায় পেলাম না)। আমি (তাঁর সন্ধানে) বের হলাম। এসে দেখলাম তিনি বাকী কবরস্তানে আছেন। তিনি বলেনঃ তুমি কি ভয় করছ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি কোন অবিচার করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অনুমান করলাম আপনি আপনার অন্য কোন বিবির নিকটে গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা মধ্য শা’বানে দুনিয়ার কাছের আকাশে অবতীর্ণ হন। তারপর কালব গোত্রের বকরী পালের লোমের চেয়েও বেশী সংখ্যক লোককে তিনি মাফ করে দেন। [জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৭৩৯] হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক-বিদ্বেষী লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হা. ৫৬৬৫, আল মু’জামুল কাবীর ২০/১০৯, শুআবুল ইমান, হদিস নং. ৬৬২৮) হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন। তাই এ রাতে আমাদের একাকী যতাসম্ভব নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তসবিহ-তাহলীল আদায় করতে পারি, কোন অসুবিধা নেই। তবে শবে বরাতের আলাদা কোন নামাজ তথা নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে নির্দিষ্ট রাকাত পড়ার রেওয়াজ ইসলামে নেই। এই রাতকে নির্দিষ্ট মনে করে ভালো খাবারের আয়োজন করা, ঘরে মসজিদ আলোকসজ্জা করা, আলো জ্বালানো, মাইকে ডাকাডাকি করা, খিচুড়ি পাকানো, হালুয়া রুটি, তাবারুক তৈরি ও মিষ্টান্ন বিতরণের খাবারের আয়োজন করা সব বিদআত। আল্লাহপাক আমাদেরকে সহীহ্ দ্বীনের উপর থেকে সহীহ্ ভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
লেখকঃ মুহাদ্দিস, আশরাফুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা ছয়না, কিশোরগঞ্জ।