3:48 PM, 13 November, 2025

রাতে হঠাৎ সংসদ সদস্য শম্ভুর কাছে মিন্নির আইনজীবী

mp-shomvu-ad-aslam

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বরগুনার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যার ১ নম্বর সাক্ষী ও আসামি স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম স্থানীয় সংসদ সংদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর(বরগুনা-১) সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। শুরু থেকেই মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সংসদ সদস্য শম্ভুর বিরুদ্ধে মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করে আসছেন।

শনিবার (২০ জুলাই) রাতে বরগুনার সদর রোডের শম্ভুর ব্যক্তিগত ল’ চেম্বারের পেছনের একটি কক্ষে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামকে দেখা যায়। এ সময় তার সঙ্গে বরগুনা বারের সভাপতি আব্দুর রহমান নান্টুও ছিলেন।

এমন পরিস্থিতিতে সংসদ সদস্য শম্ভুর সাথে আইনজীবীর এমন বৈঠকের সমালোচনা করেন মিন্নির বারা।

এর আগে শুক্রবার (১৯ জুলাই) মিন্নির বাবা গণমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ে জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এ সবকিছুই শম্ভু বাবুর (স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে সেভ করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’

শনিবার রাতে সংসদ সদস্যের বরগুনার সদর রোডের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তার সাক্ষাতের জন্য একটি গণমাধ্যমের অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিট নাগাদ বরগুনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান নান্টু এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলামকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

ওই কক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্যের পুত্র সুনাম দেবনাথ ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আক্তারুজ্জামান বাহাদুর। তারা ভেতরে প্রবেশ করার পর সুনাম ভেতর থেকে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময়ে কক্ষের বাইরে নিহত রিফাত শরিফের বাবা দুলাল শরিফও অপেক্ষায় ছিলেন।

এরপর রাত ৯টা ৫৩ মিনিট নাগাদ সুনাম কক্ষ থেকে বের হয়ে দুলাল শরিফের সঙ্গে কানেকানে কথা বলেন। এরপর দুলাল শরিফ চেম্বার থেকে দ্রুত বের হয়ে যান।

রাত ১০টা ১৫ মিনিটে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম, বারের সভাপতি আব্দুর রহমান নান্টু ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আক্তারুজ্জামান বাহাদুর সংসদ সদস্যের কার্যালয় ত্যাগ করেন। সেখানে তারা প্রায় ৩০ মিনিটের মতো অবস্থান করেছিলেন।

এ সময় তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এরপর তাদের মুঠোফোনে সাক্ষাতের বিষয়টি মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্যের কাছে আসতেই পারে। এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল।’

সংসদ সদস্য তাদের ডেকেছিলেন, নাকি তারা ইচ্ছা করে তার সঙ্গে দেখা করতে গেছেন? এ প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘এমপি বারের সভাপতিকে ফোন দিয়েছিলেন, তিনি আমাকে জানানোর পর আমি সভাপতির সঙ্গে এসেছি।’

এ বিষয়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে আর কিছু বাকি আছে?’ এমন পরিস্থিতিতে মিন্নির আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট আসলাম সংসদ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতে পারেন কিনা? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই পারেন না।’ এ বিষয়ে অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।

মিন্নির আইনজীবীর সাথে দেখা বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে সংসদ সদস্য শম্ভু বলেন, ‘তারা চা খেতে এসেছিলেন।’

প্রসঙ্গত, বরগুনা পুলিশ লাইন্সে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এ মামলায় মিন্নিসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

২৬শে জুন প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।