12:32 AM, 13 November, 2025

দেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে মাছ ধরছে ভারতীয় জেলেরা

indian-fisher-man

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অভ্যন্তরে ঢুকে মাছ ধরার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে। বঙ্গোপসাগরের আন্তর্জাতিক সীমা বা ইনোসেন্ট প্যাসেজ পেরিয়ে অন্তত ৫০ নটিক্যাল মাইল অভ্যন্তরে তারা এ মাছ ধরেন। মূলত দেশে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞার সুযোগে ভারতীয় কয়েকশ অত্যাধুনিক ট্রলার এখন সমুদ্রসীমা চষে বেড়াচ্ছে।

এদিকে এমন অভিযোগের সময়ই বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে ভারতীয় ৩২টি ট্রলারসহ ৫০০ বেশি জেলে।

দেশের মোট সমুদ্রসীমা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮শ ১৩ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে তীর থেকে ৩৬৭ কিলোমিটার বা ২০০ নটিক্যাল মাইলকে অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা বলা হয়। আর এখানেই দেশের জেলেরা মাছ ধরার সুযোগ পান। এর বাইরে আন্তর্জাতিক সীমা বা ইনোসেন্ট প্যাসেজে দু’দেশের নৌকা কিংবা ট্রলার চলাচল করতে পারলেও মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জেলে ও বোট মালিকরা অভিযোগ করেন, গত ২০ মে থেকে বাংলাদেশ সীমানায় মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির সুযোগে ভারতীয় জেলেরা এখন এ অঞ্চলে অবাধে মাছ শিকার করছে। এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকেও মাছ শিকারের অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে।

জেলেরা বলেন, ‘আমাদের দেশে অবরোধ কিন্তু ভারতে অবরোধ নেই। তারা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে বাংলাদেশের ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ এছাড়া সাগরে মাছ ধরতে না পেরে আর্থিক কষ্টে মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দেশের জেলেরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বোট মালিক সমিতির মহাসচিব আমিনুল হক বাবুল বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন মাছ আহরণ বন্ধ থাকে তখন বিদেশি ট্রলারগুলো আমাদের দেশে এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম কিন্তু আমরা কোথাও প্রতিকার পাচ্ছিলাম না।’

এদিকে রবিবার (৭ জুলাই) পায়রা বন্দরে আশ্রয় নেয়া ভারতীয় ফিশিং ট্রলারগুলো মাছ ধরার জন্যই বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করেছিলো বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় সমুদ্রসীমা থেকে এ অঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ৯২ কিলোমিটার বা ৫২ নটিক্যাল মাইল। আর তাদের নৌকাগুলো ঘণ্টায় ৮ নটিক্যাল বেগে ছুটতে পারে। সে অনুযায়ী অন্তত ৫ ঘণ্টা বোট চালিয়েই তারা এখানে এসেছে।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেরিন সাইসেন্স এন্ড ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘হটাত করে আবহাওয়া খারাপ হওয়ার ফলে নৌকাগুলি যদি তাদের দিক ভুলে যায়, প্রথমে তাদের যাওয়া কথা সাগর আইল্যান্ডের দিকে। কোন কারণে তারা সাগর আইল্যান্ডে যেতে না পারলে তারা জুলফিকার চ্যানেল বা সুন্দরবনের ভিতরে আসবে। পটুয়াখালী আসা টা অস্বাভাবিক।’

তবে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় ভারতীয় নৌযানের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড কাজ করছেন বলে দাবি করেন স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা।

মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বলেন, ‘আমাদের সমুদ্র এলাকায় যাতে অন্য দেশের বোর্ড ঢুকতে না পারে তার জন্য আমাদের নৌবাহিনী কাজ করছে।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২০ জুন থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছের প্রজনন এবং বেড়ে ওঠা নিরাপদ রাখতে সাগরে সব ধরণের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।