আটাশ ধান চাষে বিপাকে পড়েছে কৃষক

ধান কাঁটা মৌসুম আগত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে অল্প কিছু দিনের মধ্যে ধান কাঁটা শুরু হবে। এ মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কৃষকদের মাঝে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের দিগন্ত জোড়া মাঠ জুড়ে রয়েছে ধান আর ধান। তবে অল্প সময়ের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টির আগে ধান গোলায় তোলার আশায় যে সমস্ত কৃষক জমিতে আটাশ ধান লাগিয়ে ছিলেন তাদের এখন মাথাঁয় হাত। ধান কাঁটতে গিয়ে দেখেন ধানের শীষ মরা ও চিটা।
এদেশে ধানের বিভিন্ন জাত রয়েছে বিরি আটাশি, বিরাশি, উননব্বই, একশ, আটাশ, উনত্রিশ। এরই মধ্যে দু’ধরণের ধানের চাষ হয়ে থাকে এই মৌসুমে। বোরো আটাশ ও বোরো উত্রিশ । কৃষক ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা ও অল্প সময়ে ধান ঘরে তোলার আশায় উনত্রিশ এর পাশাপাশি আটাশ ধান চাষ করে থাকে । এরই মধ্যে উপজেলার অনেক কৃষক আটাশ ধান চাষ করে বিপাকে পড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মাদারিয়া, মাইজবাড়ী, ঝনঝনীয়া, পলিশা, টেপিবাড়ী, ঘোনাপড়া, টেপাকান্দি, ফলদা, ধুবলিয়া, ফসলের মাঠে প্রায় শত শত বিঘা জমিতে আটাশ ধানের মড়া শীষ, চিঁটা ধান মাথা নিচু করে জমিতে নুয়ে পড়ছে। ধান কাঁটতে গিয়ে কৃষকের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। আর এই হতাশায় মাঠে আটাশ ধান কাটছে মাদারিয়া গ্রামের কৃষক হাসমত আলী।
তিনি বলেন- আটাশ ধান বুনে আমার মাথায় হাত। ধান কাটতে গিয়ে দেখি মরা শীষ আর চিঁটা। বিঘা প্রতি যেখানে ১৬/১৭ মন ধান পাওয়ার কথা, সেখানে ৬/৭ মন হতে পারে প্রতি বিঘাতে। সার, বীজ, কাটা-মাড়াই, কামলা খরচ সব মিলিয়ে ৫/৭ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে এবারের আবাদে। অল্প বিস্তর যা আবাদ করি তাতে বাৎসরিক খরচ চলে যায়। এবার যা অবস্থা তাতে মাঝপথে কিনে খেতে হবে। দ্রব্যমূল্যর যে ঊর্ধগতি সে অবস্থায় সামনে আমার অন্ধকার আর অন্ধকার।
স্কীম মালিক মোঃ আকবর মন্ডল বলেন, আমার স্কীমের বেশ কিছু কৃষক তাদের জমিতে আটাশ ধান লাগায়। ধান ফলনের পর পরই শীষ মরা, ধান চিটা। বিদ্যুৎ খরচ, ড্রাইভার খরচ মিলে ঘাটতি পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। কৃষক আটাশ ধান চাষ করে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, আমাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
মোঃ হযরত মন্ডল, মোঃ ফজল মন্ডল, হযরত আলী খান, আব্দুল করিম সরকার জানান- অগ্রীম ফসল ঘরে তোলার আশায় প্রায় জমিতে আটাশ ধানের চাষ করেছি। ধান ফলনের পরপরই শীষ মড়া, চিঁটা ধান জমিতে। আমরা যারা এ ধান চাষ করেছি এবার সকলেই ক্ষতির সম্মুখীন। এ বছর আবহাওয়া আটাশ ধান চাষের অনুকুলে না থাকায় , ধানের মড়ক, পোকার আক্রমন, কান্ড পঁচাসহ বিভিন্ন ছত্রাকের আক্রমনে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা উপ-সহাকারী কর্মকর্তা আল মামুন জানান, আটাশ ধান চাষের আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় কৃষকদেরকে এ ধান চাষে নিষেধ করা হয়েছিল, তার পরও তারা এ ধান জমিতে লাগাচ্ছে। গরম আবহাওয়া, শীত, কুয়াশা কোনটাই সহ্য করতে পারে না আটাশ ধান। আর ধানের শীষ বাহির হওয়ার আগে ও পরে তাদেরকে পোকা-মাকড় দমন, কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলা হয়ে থাকে, যা তারা মানতে চান না । যার কারণে আটাশ ধানের চাষ করে কৃষক এত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ন কবির জানান, ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ৮ হেক্টর জমিতে বোরে ধানের চাষ হয়ে থাকে। আমরা নিষেধ করার পরও কিছু কিছু কৃষক আটাশ ধান চাষ করে । এ ধান এ আবহাওয়ায় উপযোগী না থাকায় ধান পাঁকার আগেই অর্ধেক ধান মরে যায়, আবার অর্ধেক ধান চিটা হয়। আটাশ ধান ফলন হওয়ার আগে ও পরে পোকা-মাকড়, রোগ-জীবাণুর আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নাথীবো, টোফার, ফিলিয়ার ধরনের জীবানু নাশক ঔষধ ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্ত অনেক কৃষক আমাদের নির্দেশ না মেনে তাদের মন গড়া মতো কাজ করে থাকে । যার কারণে আটাশ ধান চাষ করে কৃষক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল।
বাংলাদেশে আউশ, আমন ও বোরো এই তিনটি মৌসুমেই ধান চাষ হয়ে থাকে। ধান চাষের এই তিন মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ৫৮ লাখ মেঃ টন ধান উৎপাদিত হয়ে থাকে। শুধু মাত্র ধানে চিটা হওয়ার পরিমাণ কমিয়ে এই উৎপাদন আরও অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। স্বাভাবিকভাবে ধানে ১৫-২০% চিটা হয়ে থাকে। তবে এর পরিমাণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কিছু কিছু মাইক্রোনিট্রিয়েন্টের ঘাটতি হলে অনেকটা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার জন্য ৩০ মিলিয়ন টন খাদ্য চাহিদা পূরণ করার পরেও খাদ্য উদ্বৃত্ত হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা থাকে। যদি ধানে চিটার পরিমাণ কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো যায়।