12:29 AM, 13 November, 2025

জাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা, শিক্ষকসহ আহত অনেক

jb_1

জাবি প্রতিনিধি :

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। ভিসির বাস ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানার নেতৃত্বে শতাধিক কর্মীর একটি দল এসে এ হামলা চালায়।

এ ঘটনায় শিক্ষক-সাংবাদিকসহ ৩৫ জন আহত হয়েছে। এসময় আহতদের উদ্ধারে আসা এ্যাম্বুল্যান্সও আটকে রেখেছে হামলাকারীরা। হামলাকারীরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে এ হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। দুর্নীতি ও নানা অভিযোগে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে অবস্থান নেন। এর প্রেক্ষিতেই ‘ভিসি উদ্ধার’ অভিযানে আসেন একটি দল। এরপর হঠাৎ করেই হামলা শুরু করে আন্দোলনরত অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর।

হামলাকারীরা আন্দোলনকারীদের সমস্ত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। তাদের মারধর করে তুলে দিয়ে ভিসির বাসার সামনে এখন অবস্থান নিয়েছে। হামলার শিকার আন্দোলনকারীরা বলছেন ভিসির অনুগত ছাত্রলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে।

হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন আলিফ, ইংলিশ-৪৭, মারুফ, দর্শন-৪৪, রুদ্রনীল, দর্শন- ৪৫ সহ ৩০ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের মধ্যে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, মীর্জা তাসলিমা সুলতানা ও দর্শন বিভাগের রায়হান রাইন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় আন্দোলনের নারী কর্মী সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মারিয়াম সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়েছে।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগ এবং শিক্ষকদের (ভিসিপন্থী) একটা অংশ আমাদের উপর হামলা করেছে, টর্চার করেছে। আমরা সরাসরি হামলার শিকার হয়েছি। তারা যখন আসে আমরা এখানে শুয়ে পরি। তারা আমাদের ছেলে-মেয়েদের-শিক্ষকদের টেনেহিঁচরে মারধর করছে, বুকে পিঠে লাথি মেরেছে। নির্মমভাবে হামলা করেছে। আমাদের ৮/১০ জন শিক্ষার্থীদের খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা প্রচণ্ডরকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘আমরা ৩০ এর অধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে এ্যাম্বুলেন্স আসলে ভিসিপন্থী শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমান লাল তা আটকে দিয়েছেন।’

এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌসসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আহত, আরো হামলার হুমকি চলছে।’

‘এইসব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়েই উপাচার্য ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সেজন্যই তাদের টাকার ভাগ দিতে হয়, তাদের সব অপরাধ মেনে নিতে হয়, হলে হলে শিক্ষার্থীদের দিনের পর দিন নির্যাতনের মধ্যে রাখলেও প্রশাসন এই নির্যাতকদের হাতে হল প্রশাসন ছেড়ে দিয়ে অর্থ ও ক্ষমতার স্বাদ নিতে থাকে। আর সরকার এদেরকেই দরকার বলে সমস্যার সমাধান না করে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে থাকে।’

বর্তমানে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে অবস্থান করছে। এর আগে সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে তার বাসভবনে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থান নেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে যারা আন্দোলন করছে, ওরা শিবিরের কর্মী। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার আহ্বান জানাই।’