
মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনার তাদের স্বাভাবিক খেলা ভূলে গেছে, তারই নমুনা এই কোপা আমেরিকাতে দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি ম্যাচে। ভূল পাস, অগোছালো, পরিকল্পনাহীণ এবং অতিহ্যগত ভাবে ভঙ্গুর রক্ষন ভাগ যেন এখন আর্জেন্টিনার প্রতি ম্যাচে সঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে।
কিন্তু গত ম্যাচে কলোম্বিয়ার সাথের ম্যাচ থেকে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে, প্যারাগুয়ের ম্যাচের সাথে। তারপরও দল নির্বাচনে আর্জেন্টিনার কোচ যেন প্রতি ম্যাচে কিছু না কিছু ভূল করছে। আর্জেন্টিনার অনভিজ্ঞ খেলোয়ারগণ যেন মেসি সাথে সেভাবে তাল মিলিয়ে খেলতে পারছেনা, তেমনী মেসি একাই আক্রমণ ভাগ, মধ্যভাগ, রক্ষনভাগ দৌড়ে খেলছে, সেভাবে আর্জেন্টিনার কোন খেলোয়ার তাকে সহযোগিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
খেলার প্রথম থেকেই আক্রমন সানিয়ে খেলতে চেষ্টা করে আর্জেন্টিনার খেলোয়াররা। কিন্তু প্রতিটি আক্রমন যে ছোট ডি-বক্সের মধ্যে শেষ হয়। তাছাড়া প্যারাগুয়ের খেলোয়াররা খেলার বেশীরভাগ সময়ই সময়ক্ষেপন করতে ব্যস্ত দেখা যায়, কিছু হলেই মাঠে পড়ে যাচ্ছে, আহত হওয়ার অভিনয়ে সময় নষ্ট করার কাজে ব্যস্ত থাকা গেছে প্যারাগুয়ের খেলোয়ারদের, মনে হচ্ছিল তাদের ড্র হলেই তাদের সেরা ফলাফল। তারপও খেলাটি ছিল ফাউল এ ভরা, দুই দল মিলিয়ে মোট ৩৯টি ফাউল করেছে। দুই দল সমান ভাবে তিনটি করে মোট ছয়টি হলুদ কার্ডতো তাদের হজম করতে হয়।
ম্যাচের প্রথমই আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। প্রথম ২০ মিনিটেই দুইবার প্যারাগুয়র রক্ষনভাগের খেলোয়ারদের ফাঁকি দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি, তবে শেষ শটটা নিতে পারেননি বার্সেলোনার তারকা এই ফরোয়ার্ড।
আর্জেন্টিনা যেভাবে শুরু করেছিল তার ছন্দটি আর ধরে রাখতে পারেনি। খেলার ৩৭মিনিটের সময় প্যারগুয়ের কাউন্টার এ্যাটাকে, বাম প্রান্ত থেকে ক্ষিপ্ত গতিতে বল নিয়ে বাইলাইন থেকে পেনাল্টি পয়েন্টে দারুন এক কাটব্যাক করেন প্যারাগুয়ের মধ্যভাগের খেলোয়ার ‘মিগেল আলমিরোন’, দৌড়ে এসে ডিফেন্ডারদের মাঝ থেকে জোড়ালো নিচু শটে গোল করেন প্যারাগুয়র মধ্যভাগের খেলোয়ার ‘রিচার্দ সানচেস’। প্যারগুয়ে ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে বিরতীতে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের অল্প সময়ের মধ্যে এক ব্যাক পাসে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষ
‘ফ্রাঙ্কো আরমানি’ বলকে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে ডি-বক্সের বাহিরে প্যারাগুয়ের খেলোয়ারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন।
খেলার ৫৬ মিনিটের সময় আর্জেন্টিনার সম্মলিত আক্রমণে মেসির শট প্যারাগুয়ের খেলোয়ার এর শরীরে লেগে কর্নারের বাশিঁ বাজান রেফারি, কিন্তু আর্জেন্টিনা খেলোয়ারদের আবেদনের ফলে ‘ভিএআর প্রযুক্তির’ সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পেনাল্টি থেকে দারুন এক গোল করে
আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরান ‘লিওনেল মেসি’। উক্ত গোলে মেসি আর্জেন্টিনার পক্ষে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে মোট গোলের সংখ্যা দাড়ালো ৬৮টি। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের চিন্তার ভাজ ফেলতে আর্জেন্টিনার রক্ষন ভাগ বেশি সময় নেয়নি, মাত্র চার মিনিট পরেই ডি-বক্সের মধ্যে প্যারাগুয়ের খেলোয়ার গনসালেসকে পিছন থেকে অযথা ফাউল করে বসেন ম্যানসিটির তারকা নিকোলাস ওটামেন্দি, সাথে সাথে রেফারি পেনাল্টির বাশিঁ। কিন্তু এক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার ত্রান কর্তা হিসেবে গোলরক্ষক আরমানি পেনাল্টি সেভ করে দলকে নিশ্চিত বিপদমুক্ত করেন।
অতিরিক্ত সাত মিনিট যোগ করা সময়ে একটানা আক্রমণ করতে থাকে আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে, যেন বাকি সময়টা কাটিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় ছিল প্যারাগুয়ে। তাতে তারা সফল। দুই ম্যাচ শেষে জয়ের স্বাদ অপূর্ণই রয়ে গেল প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নদের।
সাও পাওলোতে দিনের প্রথম ম্যাচে দুভান সাপাতার একমাত্র গোলে কাতারকে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে কোয়ার্টার-ফাইনাল নিশ্চিত করেছে কলম্বিয়া। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারানো কলম্বিয়া দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে আছে।
দুই ড্রয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে প্যারাগুয়ে। কাতার ও আর্জেন্টিনার পয়েন্ট সমান ১ করে, তবে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে সবার নিচে আছে মেসিরা।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম