11:15 PM, 12 November, 2025

মনে হচ্ছে ফ্রান্সে কোনো আইন নেই

Screenshot_20210813-073053_Facebook

ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ দেখিয়েছিলেন এমন কিছু। দলে প্রতিষ্ঠিত তারকা আগেই ছিল, এই অবস্থায় লুইস ফিগো, জিনেদিন জিদান, রোনালদো নাজারিও, ডেভিড বেকহাম, মাইকেল ওয়েনদের এনে একেবারে তারকাপুঞ্জ বানিয়ে বসেছিলেন। ২০০৯ সালে আবার যখন রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি হয়ে এসেছিলেন, সেবারও কম দেখাননি। এক দলবদলে দুই ব্যালন ডি’অরজয়ী কাকা ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে টেনে এনেছেন। করিম বেনজেমা, জাভি আলোনসোদের এনেও ক্ষান্ত হননি। পরের বছরই সে দলে যোগ করেছিলেন মেসুত ওজিল, স্যামি খেদিরা ও আনহেল দি মারিয়াকে।

 

নতুন দশকে তেমনই এক তারকাপুঞ্জ সৃষ্টি করেছে পিএসজি। নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে, দি মারিয়ারা তো আগেই ছিলেন। সে সঙ্গে এবার দলে আনা হয়েছে জর্জিনিও ভাইনালডম, আশরাফ হাকিমি, সের্হিও রামোসকে। আর সেই দলে যোগ দিলেন লিওনেল মেসিও। এই প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগে সবার ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামবে পিএসজি। কিন্তু পিএসজি এটা করতে গিয়ে কীভাবে আর্থিক সংগতি নীতি ভাঙছে না, সে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বর্তমান ফ্রেঞ্চ লিগজয়ী লিলের ডিফেন্ডার জোসে ফন্ত।

 

গত মৌসুমে পিএসজিকে টপকে ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আঁ’ জিতে নিয়েছিল লিল। সে চমক শেষ হওয়ার আগেই ধাক্কা খেয়েছে দলটি। মৌসুম শেষ হতে না হতেই বিদায় নিয়েছেন কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ে। শিরোপা জেতার অন্যতম সেরা অস্ত্র গোলকিপার মাইক মাইনিয়াঁও চলে গেছেন। মিডফিল্ডার বুবাকারি সুমারেকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। চলে গেছেন লুই আরোওহো। এসবই কিছু করতে হয়েছে আর্থিক সংগতি নীতি মানতে বাধ্য হওয়ায়।

 

ওদিকে পিএসজিতে নেইমার, এমবাপ্পের মতো খেলোয়াড় আছেন। দি মারিয়া, আন্দের এরেরা, মার্কো ভেরাত্তিরাও কম বেতন পান না। শুধু নেইমারের বেতনই ফ্রেঞ্চ লিগের কিছু দলের বেতন ব্যয়ের সমান। এবার সে দলে যোগ দিয়েছেন হাকিমি, রামোস, মেসি, ভাইনালডম ও জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। তাঁদের একজন রিয়াল মাদ্রিদ ও স্পেনের অধিনায়ক। একজন আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার অধিনায়ক। ভাইনালডম নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের অধিনায়ক। দোন্নারুম্মা সদ্য সমাপ্ত ইউরোর সেরা খেলোয়াড়। এই চারজনই বেশ উচ্চ বেতনেই এসেছেন পিএসজিতে। হাকিমির জন্য ৬ কোটি ইউরো খরচ করা হয়েছে। বেতনও শীর্ষ স্থানীয় খেলোয়াড়দের বেতনই দেওয়া হবে তাঁকে।

 

পিএসজির এভাবে ইচ্ছেমতো টাকা খরচ করা নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা হয়েছে। এবার তো আরও ভালোভাবেই সে প্রশ্ন উঠেছে। লিলের পর্তুগিজ ডিফেন্ডার ফন্ত তাই প্রশ্ন তুলেছেন, আর্থিক নিয়ম মেনে পিএসজি কীভাবে করছে এই দলবদলগুলো। টকস্পোর্টের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কোনো ভণিতা না করেই বলেছেন, ‘ফ্রান্সের আর্থিক সংগতি নীতি আমি বুঝতে চাচ্ছি। প্রতিটা ক্লাব তাদের ব্যয় কমাচ্ছে। তারা খুব বেশি কিনতে পারছে না, বেশি বেতনের খেলোয়াড় নিতে পারছে না কিন্তু পিএসজি ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেখে মনে হচ্ছে, কোনো আইন নেই।’

 

ফ্রেঞ্চ লিগে এমনিতেই পিএসজির আধিপত্য। গত মৌসুমে গালতিয়ের দুর্দান্ত কৌশলই শুধু তাদের শিরোপা পেতে দেয়নি। এ মৌসুমে সে দলকেও ধরে রাখতে পারেনি লিল। গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। জেতার মতো কোনো প্রকল্প না দেখে কোচ দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেছেন নিসে।

 

নিস ছাড়া ফ্রেঞ্চ লিগে অন্য সব ক্লাবের অবস্থাও লিলেরই মতো। সেখানে পিএসজি কীভাবে করোনার এই সময়ে নিয়ম না ভেঙে মেসি, রামোস, ভাইনালডমদের দলে টানছে, সেটা বুঝে উঠছেন না ফন্ত, ‘সবাইকে বাজেট কমিয়ে আনতে হচ্ছে। লিলের কিছু খেলোয়াড়কে বেতন কমাতে হচ্ছে। আর পিএসজির দিকে তাকান, সেখানে দোন্নারুম্মা, রামোস,ভাইনালডম যোগ দিচ্ছেন। তারা সবাই অনেক বেশি বেতনে আসছে। আর ওদের এমনিতেই এমন সব খেলোয়াড় আছে, যারা অবিশ্বাস্য বেতন পায়।’

 

ফন্তের অভিযোগ অবশ্য অবান্তর নয়। গত মৌসুমে লিলের সব খেলোয়াড়ের বেতন ছিল ৩ কোটি ইউরোর মতো। সে বেতন দিয়ে আর্থিক সংগতি নিয়ম মানা যাচ্ছিল না বলে খেলোয়াড় ছেড়ে দিতে হয়েছে লিলকে। ওদিকে পিএসজিতে শুধু নেইমারের বেতনই ৩ কোটি ইউরোর বেশি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *