3:29 AM, 13 November, 2025

ম্যান সিটির কাছে হেরেও সেমিতে টটেনহাম হটস্পায়ার

Tot
মোঃ আলী আকবর রনী, ক্রিড়া প্রতিবেদক:
 
উত্তেজনা আর দমবন্ধ করা ম্যাচে ম্যান সিটির কাছে হেরেও সেমিতে টটেনহাম হটস্পায়ার
গতকাল রাতে ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়াটার ফাইনাল এর  ম্যান সিটি এবং টটেনহাম এর দ্বিতীয় লেগ। কারণ খেলাটিতে সিটিকে শুধু জয় নয়, সাথে অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে হবে, যদি ড্র হয় তাহলে টটেনহাম ঘরের মাঠে গোল এবং প্রতিপক্ষ এর মাঠে যদি গোল করে ম্যাচ হেরেও যায় তাহলেও তারা সেমিতে চলে যাবে। এরকমই এক অংকের হিসেব করা ম্যাচে খেলতে নামে দুই দল।
প্রতিটি ফুটবল প্রেমীদের জন্য গতকাল রাতটি ছিল একটি রোমাঞ্চে ভরা এবং শ্বাসরুদ্ধকর। কারণ কি ছিল না খেলাতে। গোল, আক্রমন পাল্টা আক্রমন, উত্তেজনা, অনিশ্চিত ফলাফল। খেলার শেষ মুহুত্ত্ব পর্যন্ত কে যাচ্ছে সেমীতে তা কারও হিসেব করা খুবই কষ্টকর ছিল।
দমবন্ধকরা এক ফুটবল যুদ্ধের  ইতিহাস হয়ে রইল ম্যান সিটির ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়াম, যার প্রতিটি মুহুত্ত্ব ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। খেলার প্রথম ১১ মিনিটের মধ্যে ৪ গোল। আবার ১০ মিনিট পর আরেকটি। প্রতিটি মুহুত্ত্বে খেলার চিত্রপট পাল্টালো। শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর এক জয় পেলো ম্যানচেস্টার সিটি; কিন্তু তাদের ঘরের মাঠে জিতেও সেমীতে যাওয়া হলোনা। তাদের জন্য হতাশার সাক্ষি হয়ে রইলো অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল না করা এবং গোল খাওয়া। টটেনহাম হটস্পায়াররা যে ভুলটি করেনি তারা ঘরের মাঠে তাদের গোলবার টিকে রেখেছিল নিরাপদ এবং গোল শূণ্য। তাইতো তারা খেলাটি ৪-৩ গোলে হেরেও  অ্যাওয়ে ম্যাচে ১ গোল নিয়ে গোল ব্যবধানে  চেপে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে।
টটেনহাম হটস্প্যায়ারদের জন্য গতকাল রাতটি ছিল ইতিহাস সৃষ্টিকরা এক রাত, কারণ টটেনহাম এই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে পা রাখল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ শেষ ষোলোতে রিয়াল মাদ্রিদ ও কোয়ার্টার-ফাইনালে ইউভেন্তুসকে হারানো আয়াক্স।
টটেনহাম এবং সিটির দুই লেগের লড়াইয়ে মূলত ব্যবধান গড়ে দেয় টটেনহামের দক্ষিন কোরিয়ান ফুটবল সুপার ষ্টার ‘‘সন হিউং-মিন”। প্রথম লেগের জয়সূচক গোলের পর দক্ষিণ কোরিয়ার এই ফরোয়ার্ড  ইতিহাদ ষ্টেডিয়ামে সিটির বিপক্ষে করেন মহামূল্যবান দুটি গোল। ম্যান সিটির ইংলিশ তারকা রাহিম স্টার্লিংয়ের জোড়া গোলে শেষ চারের স্বপ্ন জেগেছিল সিটি শিবিরে। কিন্তু শেষটা সুখকর হয়নি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ এর পয়েন্ট টপারদের।
খেলাটির গোল উৎসব শুরু হয়ে যায় খেলার ৪র্থ  মিনিটেই। সতীর্থের সঙ্গে একবার বল দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সে রক্ষণচেরা পাস বাড়ান কেভিন ডি ব্রুইনে। জায়গা বানিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন স্টার্লিং।
সিটির দুই লেগ মিলিয়ে ১-১ সমতা টানার স্বস্তি স্থায়ী হয় মাত্র তিন মিনিট। আক্রমণ রুখতে গিয়ে ফরাসি ডিফেন্ডার এমেরিক লাপোর্ত বল ঠেলে দেন হিউং-মিনের পায়ে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার নেওয়া নিচু সোজাসুজি শট গোলরক্ষক এদেরসনের পায়ে লেগে ভিতরে ঢোকে।
খেলার ১০ম মিনিটের সময়তো সিটির দর্শকদের স্তব্দ করে দেন ‘সন’। ক্রিস্তিয়ান এরিকসেনের পাস ডি-বক্সে পেয়ে ডান পায়ের উঁচু শটে দূরের পোস্ট দিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি। কিন্তু ম্যানসিটির দর্শকদের জন্য এক মিনিট পরই সৌভাগ্যসূচক গোলে ম্যাচে সমতায় ফেরে সিটি। কাছ থেকে বের্নার্দো সিলভার নেওয়া শট ঠেকাতে একটু আগেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন উগো লরিস, বল ডিফেন্ডার ড্যানি রোজের পায়ে লেগে দিক পাল্টে গড়াতে গড়াতে গোললাইন পেরিয়ে যায়।
খেলার ২১তম মিনিটে বেলজিয়াম তারকা ডি ব্রুইনে এবং ইংলিশ তারকা স্টার্লিংয়ের দারুণ বোঝাপড়ায় আবারও এগিয়ে যায় ম্যান সিটি। ডান দিক থেকে বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের দূরের পোস্টে বাড়ানো দুর্দান্ত এক ক্রস পেয়ে কোনাকুনি শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন ছন্দে থাকা ইংলিশ মিডফিল্ডার। ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় সিটি, দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ৩-৩। কিন্তু দুইলেগ মিলিয়ে অ্যাওয়ে গোলে এগিয়ে থাকে সফরকারী টটেনহাম।
বিরতির পরই সিটির মুখে হাসি ফুটাতে দেরী করেনী আর্জেন্টাইন তারকা আগুয়েরো।  ৫৯ মিনিটের সময় আগুয়েরোর নৈপুণ্যে ব্যবধান বাড়ায়।  ডি ব্রুইনের রক্ষণচেরা পাস ডি-বক্সে ডান দিকে পেয়ে জোরালো কোনাকুনি শটে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ৪-৩ করেন আর্জেন্টাইন তারকা। তখন আবারও সিটির দর্শকদের মনে স্বপ্ন বাসা বাধে সেমীতে যাওয়ার।
সিটির স্বপ্ন ভাঙতে বেশী সময় নেয়নি টটেনহাম। আবারও চরম নাটকীয়তা। ৭৩ মিনিটে সেটপিসে ম্যাচে সমতা টানে টটেনহ্যাম। কিরান ট্রিপিয়ারের কর্নারে উড়ে আসা বল ভাগ্যদেবতার ইচ্ছায় ছোট ডি-বক্সে স্পেনের ফের্নান্দো লরেন্তের ঊরুতে লেগে জালে জড়ায়। রেফারীর গোল এর বাশীঁ। সিটির খেলোয়ারদের আবেদনের মুখে রেফারী ভিআর সাহায্যে গোলের নিশ্চিত বাশিঁ বাজান। দুই লেগ মিলিয়ে দুই দলের স্কোল লাইন আবারও সমতায়। কিন্তু অ্যাওয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে যায় টটেনহাম। বল তার হাতে লেগেছিল কি-না, ভিএআর দেখে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইনে সমতা ফেরে; কিন্তু অ্যাওয়ে গোলের হিসেবে ফের এগিয়ে যায় টটেনহ্যাম।
খেলার অতিরিক্ত সময়ের ৩য় মিনিটে স্টার্লিং জালে বল পাঠালে উচ্ছ্বাসে মাতে স্বাগতিক সমর্থকরা। সাইডলাইনে পেপ গুয়ার্দিওলার উল্লাস ছিল বাধভাঙ্গা। তবে সব আনন্দ উড়ে যায় মুহূর্তের মধ্যেই। কারণ রেফারি ভিআর পদ্ধতিতে গোলটি যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেয় আর কপাল পুড়লো সিটির। আক্রমণ তৈরির সময় আগুয়েরো অফসাইডে থাকায় ভিএআরের সাহায্যে বাতিল হয় গোল। ম্যাচ শেষে সিটি খেলোয়াড়দের চোখে মুখে ছিল হতাশা, কারো চোখে পানি। দুর্দান্ত এ জয়ের পরও যে বিদায় নিতে হলো ইউরোপ
সেরার মঞ্চ থেকে।