রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় করা পুলিশের মামলায় বিএনপির মৃত নেতা মিন্টুকেও আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মিন্টুর স্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, কষ্ট ছাড়া রাজনীতি আমাদের কিছুই দেয়নি।
গত ১৯ এপ্রিল নিউমার্কেটের সহিংসতার ঘটনায় ২৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করে পুলিশ। পুলিশের এ মামলার এক নম্বর আসামি বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। বাকি ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জন ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছেন হাইকোর্ট থেকে।
আগাম জামিন পাওয়া নেতাকর্মীরা হলেন আমীর হোসেন আলমগীর, মিজান, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম সন্টু, শহীদুল ইসলাম শহীদ, জাপানি ফারুক, মিজান ব্যাপারী, আসিফ, রহমত, বিল্লাল, মনির, জুলহাস ও বাবুল।
দলটির আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এ মামলার ২৩ নম্বর আসামি মিন্টু দুই বছর আগে মারা গেছেন। আর চার নম্বর আসামি টিপু সাত বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। শুধু বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাদের আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির আইনজীবীর এমন তথ্যের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হয় মিন্টুর স্ত্রীর সঙ্গে। মিন্টুর স্ত্রীর নাম ফারজানা। তিনি একজন গৃহিণী। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার আদাবরে থাকেন তিনি।
মিন্টুর স্ত্রী ফারজানা জানান, দুই বছর আগে নয়, ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে মারা যান মিন্টু। দাফন করা হয় নোয়াখালীর আমিরাবাদে। মৃত্যুর আগে ১৯ মাস বিছানায় পড়ে ছিলেন ৫২ বছর বয়সী মিন্টু। ব্রেন স্ট্রোক করে প্যারালাইউজ হয়ে গিয়েছিল। তবে মিন্টুর স্ত্রীর দাবি তার স্বামী মারা গেছে হার্ট অ্যাটাকে।
মিন্টুর স্ত্রী আরও জানান, মারা যাওয়ার আগে কাউকে চিনতে পারত না সে। এমনকি নিজের নামও বলতে পারত না। অসুস্থতার আগে সারাক্ষণ মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তখন কেউ তার পাশে ছিল না এমনকি দলও না। কষ্ট ছাড়া রাজনীতি আমাদের কিছুই দেয়নি বলেও আক্ষেপ করেন মৃত বিএনপি নেতা মিন্টুর স্ত্রী ফারজানা।
এদিকে এ মামলায় গত ২৩ এপ্রিল বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হালদার অর্পিত ঠাকুর আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, গত ১৯ এপ্রিল রাত পৌনে ১টা থেকে রাত ২টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত অজ্ঞাতনামা ৬০০-৭০০ জন ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীসহ অজ্ঞাতনামা ২০০-৩০০ জন ব্যবসায়ী ও কর্মচারী নিউমার্কেট থানাধীন চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেয়। তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জখম, ভাঙচুর করার অপরাধ করেছে।
মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, মূল রহস্য উদ্ঘাটন, এজাহারভুক্ত আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে গ্রেফতারের লক্ষ্যে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে ২২ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ১৮ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও ১৯ এপ্রিল সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হন। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের একজন ডেলিভারিম্যান, অন্যজন দোকান কর্মচারী। ডেলিভারিম্যান নাহিদের নিহতের ঘটনায় বাবা মো. নাদিম হোসেন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মোরসালিনের ভাই বাদী হয়ে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। একটি মামলা বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে এবং অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে। দুই মামলাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম