প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ১২:৩১ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১৯, ২০১৯, ১:২৯ পি.এম
যে কথা বলা যায় না
মারুনা রাহী রিমি
সব বাবা-মায়েরা তাদের কন্যাকে রাজকন্যার এর মত বড় করেন এবং সেই কন্যাকে বিয়ে দেন এই ভেবে যে, কন্যাটি স্বামীর বাড়িতে রাজরানীর মত জীবন-যাপন করবে। খুব আশা নিয়ে বাছাই করে বিয়ে দেন তাদের আদরের প্রিয় কন্যাটিকে যার ভাগ্যে হয়তো শেষ পর্যন্ত রাজরানী নয়, চাকরানীর ভাগ্য জোটে। আমাদের দেশে ম্যক্সিমাম ছেলেদের পরিবারের একটাই অভিযোগ থাকে যে, ছেলের বউ এসে ছেলেকে তাদের কাছ থেকে আলাদা করে নিয়ে যেতে চায়, আলাদা ভাবে নিজের সংসার গড়তে চায়। মেয়েরা এতই খারাপ হয় যে, সব সময় বাবা-মায়ের কাছেই বেশি থাকতে চায়। শশুরবাড়ি থেকে দূরে বাড়ি নিয়ে বাপের বাড়ির কাছাকাছি বাড়ি নিয়ে নিজের একটা সংসার গড়ে তোলে।
ম্যাক্সিমাম ছেলেদের বাবা-মায়েরা এটা একবারো ভেবে দেখে না যে, যেই মেয়েটিকে তারা বউ করে নিয়ে এসেছে সেই মেয়েটিও তাদের মেয়ের মতই কারো না কারো রাজকন্যা ছিল, আছে এবং থাকবে। তাকে নিজের কন্যার মত না মানতে পারলেও এতটা সম্মান অবশ্যই দেয়া উচিৎ যা একটা চাকরানীর সম্মানের থেকেও অনেকটা বেশি যদিও আজকাল ছেলের বউদের থেকে বেশি দাপট ও সম্মান মর্যাদা বেশি থাকে। কারন মাস শেষে কাজের জন্য তাকে অনেক বড় সম্মানী বা বেতন তো দিতেই হয়, উল্টা কাজের জন্য রাগারাগি বা গালাগাল দেয়ার অধিকারও তাদের থাকে। কিন্তু কোন কারনে ছেলের বউ এর মুখ থেকে চাকরানীদের মত একটু চেঁচিয়ে কথা বললেই মেয়েটা হয়ে যায় খারাপ, বাবা-মা কিছু শিখিয়ে পাঠায় নি ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলেই কি মেয়েগুলো খারাপ? নিজের কন্যার মত না হলেও কিছুটা সম্মান-মর্যাদা, আদর-যত্ন করলে আসলেই কি সেই মেয়েরা বার বার বাপের বাড়ি ছুটে যেতে চাইতো? বাপের বাড়ির আশে-পাশে বাড়ি নিয়ে স্বামীর সাথে আলাদা সংসার গড়তে চাইতো? আসলেই কি শশুরবাড়িতে তাদের মন টেকানো যেতো না?
মেয়েদের দুর্ভাগ্য যে, তাদের বিয়ের পরে বাপের বাড়ির আদর-সোহাগ ভুলে যেতে হয় অন্য কারো বাড়িতে। সম্পূর্ণ নতুন একটা জগতে তাকে মানিয়ে নিতে হয়। নতুন বিছানা, নতুন বালিশে ঘুম না এলেও ছটপট করতে হয়। ঘুম ঠিক মত না এলেও ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠে যেতে হয়। আবার মন মত কিছু করাও যায় না। কারন লোকে বলবে, কেমন মেয়ে রে বাবা! বাবা-মা কিচ্ছু শিখিয়ে পাঠায় নি। আমরা সব সময় বউদের কাছেই আশা করি যে, তাদের বাবা-মায়েরা শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠাবে। কেন আমরা সেই পরের মেয়েকে নিজের হাতে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে পারি না? কেনই বা শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে? তাদের কি একটু দায়িত্ব থাকে না মেয়েটাকে নিজের বাড়ির মত একটু স্বাধীনতা দিয়ে মানিয়ে নিতে? একটু বুঝতে পারি না যে, মেয়েটার কেমন খারাপ লাগতে পারে? তারপরেও যখন মেয়েটা অন্য পরিবেশে খাপ খায়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয় তখন মেয়েটাকে আমরা দোষারোপ করি বা খারাপ মনে করি। একবারও ভেবে দেখি না, সেও তো আমার মেয়ের মতই কারো না কারো মেয়ে! সেও তো আমার মেয়ের মত কারো না কারো রাজকন্যা। আমার মেয়ের জন্য যেসব কিছু বাধ্যকর নয়, অন্যের এই মেয়েটার জন্য কেন সব কিছু বাধ্যতামূলক হবে?
যেকোনো মেয়েই খারাপ হয়ে পৃথিবীতে আসে না। পর্যাপ্ত সম্মান, আদর, ভালবাসা পেলে সেই মেয়েটির কোন সমস্যা হয় না শশুরবাড়িতে নিজেকে খাপ খায়িয়ে মানিয়ে নেয়ার মত। অভাব-অনটনেও অনেক মেয়েরা নিজেদের খাপ খায়িয়ে নিতে পারে বা মানিয়ে নিতে পারে যদি সেই পরের বাড়িতে আপন বাড়ির মত ইজ্জত, সম্মান, আদর, ভালবাসা মেলে। শুধু স্বামী নিয়েই মেয়েটার জীবন গড়ে উঠে না। গড়ে উঠে একটা পরিবার নিয়ে। সেই পরিবার ততক্ষন পর্যন্তই সে আপন করে নিতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে পরিনত সম্মান, মর্যাদা, ভালবাসা দেয়া হয়। খুব খারাপ লাগে যখন পরের মেয়ে হিসেবে চাকরানীদের থেকেও নিম্নমানের সম্মান, মর্যাদাও ভাগ্যে নসীব হয় না। মনে হয়, তারাও আমাদের থেকে অনেক সম্মানের অধিকারী। এমনই যদি হবে তবে বিবাহ নামক প্রথাটির উচ্ছেদ করে চাকরানী প্রথা গঠন করা উত্তম। এতে বিয়ে করে একটা মেয়ের জীবনও কেউ নষ্ট করবে না। বরং চাকরানীকে ৫০০০ টাকার বদলে ১০০০০ টাকা দিলেই বউ+চাকরানী উভয়ের কাজ ই করে দিবে। এতে বউ এর ভরনপোষণের জন্য কাউকে বাধ্যও হতে হবে না আর বউ জাতীয় নিম্নমানের চাকরানীও ঘরে তুলতে হবে না যে কিনা বিনা বেতনের চাকরানীর ভূমিকা পালন করবে।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম