নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশের কিছু ওসি ও ডিসি নিজেদেরকে জমিদার মনে করে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিনের জন্য করা আবেদনের ওপর শুনানি চলাকালে বিচারপতি মো: মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে হয়ে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো: আহসান উল্লাহ ও সালমা সুলতানা। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটির বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও আইনজীবী মো. আব্বাস উদ্দিন।
শুনানি চলাকালে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, ‘কিছু কিছু ওসি-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করে। মনে হয় তারাই অল ইন অল।’
এ সময় আসামী পক্ষের আইনজীবী মো: আহসান উল্লাহ বলেন, ‘তার ( ওসি মোয়াজ্জেম) মোবাইল থেকে ভিডিওটি এক সাংবাদিকের হাতে চলে গেছে। সেখান থেকেই ভিডিওটি ছড়িয়েছে।’
এর উত্তরে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকদের হাতে ভিডিওটি আগে গেলে তাকে (নুসরাত) মরতে হতো না।’
আইনজীবী মো: আহসান উল্লাহ আরো বলেন, ‘দেশে সাংবাদিকদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। ওই সাংবাদিক ওসির মোবাইল থেকে ভিডিওটি নিয়ে ছড়িয়েছে এবং তা স্বীকার করেছে। যে ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তার সাজার মাত্রা কম, অপরাধটি জামিনযোগ্য এবং তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে তার চিকিৎসা দরকার বলেই জামিন আবেদন করেছি।’
এর উত্তরে আদালত বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি গুরুতর। সে অপরাধে সাজা বেশি না কম তা বড় কথা নয়।’
এ সময় আসামী পক্ষের আইনজীবী মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ব্যক্তিগত বিষয়ে করা মন্তব্যের জবাবে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকরা সমাজের দর্পনের মতো, ব্যারিস্টার সুমন ও সমাজের দর্পন।’
ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী এ সময় বলেন, ‘সরকারি চাকরি যারা করেন তারাই জানেন তাদের কি কষ্ট!’
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার শুনানিতে আদালতকে বলেন, ‘সরকারি অফিসার হয়ে তিনি (মোয়াজ্জেম) ভিডিও করলেন, তা ভাইরাল হলো। তাকে জামিন দিলে জনমনে কী মেসেজ যাবে? সে অসুস্থ থাকলে জেল অথরিটি রয়েছে, তারাই তাকে চিকিৎসা করাবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজনারস সেলে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ আছে।’
প্রসঙ্গত, মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে গত ৬ এপ্রিল পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এর দিন দশেক আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান নুসরাত। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পরোয়ানা জারির দুদিন পর মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। তারপর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ২০ দিনের মাথায় গত ১৬ জুন মোয়াজ্জেম হোসেনকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম