রাবি প্রতিনিধি :
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকগণ প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিং-এ ব্যস্ত থাকেন। অনেকে আবার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন। এটা অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানুষ সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনেই দেখতে চায়। তাই ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সাথে তারা আপস করবেন না।’
৩০ নভেম্বর, শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ সমাবর্তনে শিক্ষকদের এই আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের তিন হাজার ৪৩২ গ্র্যাজুয়েটের অংশগ্রহণে শেখ কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনের বক্তা ছিলেন ভারতের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘আপনারা শিক্ষক, উন্নত জাতি তৈরির মহান কারিগর। একজন শিক্ষক নিছক একজন বক্তা নন। তিনি শিক্ষাগুরু। শিক্ষকের কথা কেবল বক্তৃতা নয়- তা বাণী। বাণী শ্রোতার বুদ্ধি ও বিবেককে জাগ্রত করে। শ্রোতার অন্তরে জ্ঞানের মশাল প্রজ্জ্বলিত করে। আদর্শ, প্রচেষ্টা, বৃত্তি, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। তাই একজন শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ ও ন্যায়-নীতির প্রতীক। ব্যক্তিস্বার্থের কাছে আদর্শ যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয় সে দায়িত্ব শিক্ষদেরই নিতে হবে। শিক্ষকরা রাজনৈতিকভাবেও খুবই সচেতন ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও চিন্তা চেতনায় একজনের সঙ্গে আরেকজনের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব যেন প্রতিষ্ঠানে বা শিক্ষার্থীর ওপর না পড়ে তাও নিশ্চিত করতে হবে।’
সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রকাশিত খবর ও প্রতিবেদন দেখে আচার্য হিসেবে মর্মাহত হয়েছেন জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মূলত জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্র। এখানে নিরন্তর গবেষণার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন সৃষ্টি হয় নবতর জ্ঞানের, তেমনই বহুমুখী সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মননে জাগ্রত হয় মানবিক মূল্যবোধ। শিক্ষার সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধ পৃথিবীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কিছু ঘটনা এই মানবিক মূল্যবোধের বিকাশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা যেন এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন থাকি এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা ও মানবিক মূল্যবোধের পীঠস্থান হিসেবে সমুন্নত রাখি।’
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মনে রাখবে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে তোমাদের শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। এখন সময় এসেছে সেই ঋণ পরিশোধ করার। তোমরা তোমাদের মেধা, কর্ম ও সততা দিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণ করতে পারলে সেই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে। কর্ম উপলক্ষে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন, ভুলবে না শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী, সহপাঠীসহ এ বিশ্ববিদ্যালয়কে। ভুলবে না এ দেশ ও এ দেশের সাধারণ জনগণকে। মনে রাখতে হবে বাঙালির শেকড় এই সাধারণ জনগণের মধ্যেই প্রোথিত। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের চাইতেও দেশ গড়ার সংগ্রাম বেশি কঠিন। দেশ গড়ার সংগ্রামে আরো বেশি আত্মত্যাগ, আরো বেশি ধৈর্য, আরো বেশি পরিশ্রম দরকার।’ জাতির পিতার এই আহ নকে তোমরা বুকে ধারণ করে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবে।”
‘তোমরা আজ গ্র্যাজুয়েট, দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমাদের তারুণ্য, জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নে প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সবসময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে। নৈতিকতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। রাষ্ট্রের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে তোমাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা, তোমরা কখনো অর্জিত ডিগ্রির মর্যাদা, ব্যক্তিগত সম্মানবোধ আর নৈতিকতাকে ভূলুণ্ঠিত করবে না। বিবেকের কাছে কখনো পরাজিত হবে না’ যোগ করেন তিনি।
এর আগে শহীদ শামসুজ্জোহাসহ গণিত বিভাগের ড. হবিবুর রহমান, সংস্কৃত বিভাগের ড. সুখরঞ্জন সমাদ্দার এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের মীর আবদুল কাইয়ুমের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি। বিশ্ববিদ্যালয়টির গর্বিত এই উত্তরাধিকারের বিষয়টি মনে রেখে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে প্রত্যেকে নিয়োজিত হবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম