9:42 AM, 13 November, 2025

প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে শিশুদের দিয়ে ইলিশ শিকার

fishing

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিত্যনতুন পন্থায় ইলিশ শিকার করেই চলেছেন অসাধু জেলেরা। প্রশাসন অভিযানের প্রেক্ষিতে জেল-জরিমানা থেকে বাঁচতে তারা ব্যবহার করছেন শিশুদের। বয়স বিবেচনায় নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত শিশুদের দণ্ড দিতে পারে না। এ সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে কিছু জেলে ইলিশ শিকার করতে শিশুদের নদীতে নামিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে প্রথম আলো।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ থেকে পরিচালিত প্রত্যেক অভিযানেই জেলেদের সঙ্গে শিশুদের আটক করা হয়েছে। কিন্তু বয়স বিবেচনায় নিয়ে শিশুদের দণ্ড দিতে না পারায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

আরো জানানো হয়, জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ গতকাল ২২ অক্টোবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত অভিযান চালিয়েছে ১০৯টি। ৮৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৯৫০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর ২৫০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় ইলিশ শিকার, বিপণন, পরিবহন, বিক্রি ও মজুত নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই শরীয়তপুরের ৬৯ কিলোমিটার পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার অব্যাহত রয়েছে। এতে নিধন হচ্ছে মা ইলিশ।

সোমবার বিকেলে জেলার জাজিরা উপজেলার পৈলান মোল্যাকান্দি এলাকায় পদ্মা নদীতে যান এ প্রতিবেদক। তিনি দেখতে পান, একটি নৌকা নিয়ে নদীতে ইলিশ মাছ শিকার করছে স্থানীয় তিন শিশু। ওই তিন শিশুর সাথে কথা বলে জানা যায়, একজন উপজেলার পাইনপারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র উজ্জ্বল খান (১১), পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শরীফ বয়াতি (১২) ও পূর্বনাওডোবা পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তাজুল ইসলাম (১৩)।

‘কেন তারা মাছ শিকার করছে’ এমন প্রশ্নে শিশুরা জানায়, তাদের আত্মীয় আলমখাঁরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন তাদের নৌকা ও জাল দিয়েছেন। প্রাপ্ত মাছের অর্ধেক দেলোয়ার আর অর্ধেক ওই তিন শিশু পাবে বলে তাদের কথা দেয়া হয়েছে। এভাবেই তারা সপ্তাহখানেক ধরে স্কুলে না গিয়ে নদীতে মাছ শিকার করছে। তারা শিশু হওয়ায় প্রশাসনের লোকও তাদের কিছু বলে না।

নৌকার মালিক দেলোয়ার হোসেন এ প্রসঙ্গে জানান, তিনি ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করেন। তার একটি ইঞ্জিন ছাড়া ছোট নৌকা নদীর তীরে বেকার পড়ে ছিল। তাই নৌকাটি তিনি ওই শিশু তিনটিকে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ওদের দিয়ে মাছ শিকার করলে আটক হওয়ার বা জরিমানা দেওয়ার ঝামেলা থাকে না। শিশু বিবেচনায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’

জাজিরার কাজীয়ারচর এলাকায় পদ্মায় মাছ শিকার করতে দেখা যায় আরো দুই শিশু-কিশোরকে। এদের একজন দেলোয়ার হোসেন (১৪) ও অপরজন মোবারক হোসেন (১২)। তাদের বাড়ি নড়িয়ার নওপাড়া এলাকায়। পরিবারের বড়দের সঙ্গে নদীতে ইলিশ মাছ শিকার করতে এসেছে বলে স্বীকার করে তারা।

দেলোয়ার ও মোবারক জানায়, তারা কখনো নদীতে মাছ শিকার করে না। ইলিশের অভিযান শুরু হওয়ার পর তাদের এক চাচা তাদের নদীতে নিয়ে এসেছেন। প্রথম দুই দিন তাদের মাছ ধরার কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। এখন একাই তারা জাল ফেলে মাছ তুলতে পারে। এ সময় পুলিশ এলে নৌকায় তাদের রেখে বড়রা পালিয়ে যায়। শিশুদের কিছু বলে না পুলিশ।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘ভেদরগঞ্জে যতগুলো অভিযান চালিয়েছি, প্রত্যেক অভিযানে বড় জেলেদের সঙ্গে শিশুদের আটক করা হয়েছে। বয়সের বিবেচনায় শিশুদের কারাদণ্ড দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু জেলে ইলিশ শিকারে শিশুদের নদীতে নামাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত ১২ দিনে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্তত ১ হাজার ১০০ জেলেকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৫০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

অনেক স্থানে শিশুরাও মাছ শিকার করছে উল্লেখ করে তিনি জানান, শিশুরা আটক হলে পরে অভিভাবককে ডেকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।