
হ্যালো.. হ্যালো... এই তুমি ফোন রিসিভ করোনা কেনো?? মোহাম্মদপুর গিয়েছিলে তুমি? বলো! ও বুঝেছি এখনো ঘুুমাচ্ছ তুমি! বেলা কটা বাজে দেখেছ? ১২টা ৩০ মিনিট! পারবানা আমাকে গতকালই বলতে! ধ্যাত! কী মানুষরে বাবা!
হৈম, এই.... এই....এই... শোনোনা!
আমি খুব ভোরে উঠেছিলাম। বের হবো হবো ভাবলাম এখুনি যাই। কিন্তু আবার ঘুমিয়ে গিয়েছি।
এতো সকালে তোমার জন্য তারা বসে আছে সব নিয়ে! আল্লাহ একটা মস্ত বড় গাধা জুটেছে আমার কপালে। রাখলাম আমি ফোন!
হৈম, তুমি একটু বের হবা ২টার দিকে? একটু আসো আমি অপেক্ষা করব আমার ওই প্রিয় জায়গাটায়।
(ফোনটা কেটে গেল ওপাশ থেকে গড়গড় করতে করতে)।
(নির্জন এই জায়গাটায় সে প্রতিদিন বসে, নিরব চারপাশটা, কথা কয় পাখি গাছ লতাপাতার সাথে)
এ শহরে ৫০ টাকার জন্য জীবন নিয়ে নেয়, ৫০ টাকার জন্য নারী তার সতীত্ব বিক্রি করে। কেমন শহরে বাস করছি। মানুষের চেয়ে বরং এই সবুজ গাছ, পাখি কত সুন্দর।
তোমার প্রতিদিন এমন ডাকাডাকি আর ভালো লাগে না। কত কষ্ট করে আমাকে আসতে হয় জানো? একবার কী ভেবে দেখেছ? তুমি পুরুষ চাইলেই দুচোখ যেদিকে যায় যেতে পারো আমি পারি না।
আমার কথা বলবে। বলবে তাঁর সাথে সময় কাটাতে যাচ্ছি! আমি তো জানি এ শহরে তুমিই এক মাত্র মেয়ে যে কিনা গর্দভকে ভালোবাসো। গর্দভকে যে ভালোবাসে সে মেয়ে কতটা ভালো মনের হতে পারে। ধরো, এই শহরটা যদি সৌরজগত হয় তুমি এই জগতের সবচেয়ে সুন্দর, উজ্জ্বল, নক্ষত্র। আর আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সোপান। তাহলে তোমার বাবা তোমাকে সন্দেহ করবে কেনো? এমন মেয়ে যার হয় সে তো পরম সৌভাগ্যবান।
আমি এসব শুনতে আসিনি! বলো কী দরকারে ডেকেছ? আর এই ছেড়া ঢিলেঢালা টিশার্টটা কী তুমি বাদ দিবানা! আর কতদিন চলবে এটা? গত সপ্তাহে তোমার পছন্দের নীল রং এর টিশার্টটা কী করেছ?
ওটা রেখেছি আমার আলমারিতে। ওটা পড়ব সেদিন, যেদিন এ শহরের সূর্যটা পূর্ণ আলো দিবে, বসন্ত বায়ুতে প্রকৃতি বাসন্তী হবে। একে অপরের পরিপূরক হবে সকলে সেদিন পড়ব! এই অসময়ে তোমার দেওয়া মূল্যবান জিনিসকে অবমূল্যায়ন করতে চাইনা!
আর শোনো, গতরাতে আমি দু'ঘন্টা অজ্ঞান ছিলাম। দ্বীপ এসে দেখে আমি মেঝেতে পড়ে আছি। সকালে খুব করে উঠতে চেয়েও আমি পারিনি। তবুও উঠে বাইরে বের হবো আবার পড়ে গিয়ে বাম হাটতায় কেটে গিয়েছে। আমি বুঝি বেশিদিন....
চুপ চুপ! চুপ! একদম চুপ! তোমাকে নিয়ে আমি কী করব বলোতো! একটাবার তুৃৃমি দ্বীপকে দিয়ে আমাকে খবরটা দিতে পারতে! আমার কে আছে আর বলো? আমি একটা ছাগল, গর্দভ, পাগলকেই ভালোবেসেছি। এই পাগলটাই তো আমার সব। আমি রাতেই চলে আসতাম। দেখি হাতটা...
( হাত দেখতে থাকে হৈম, সে একদৃষ্টে হৈমর এমন বিষাদে ভরা অস্থির চেহারাটাকে দেখতে থাকে)
আচ্ছা হৈম, তুৃমি না একটু আগে বললা কত কষ্টে তুৃমি আসো পাগলটার সাথে কথা বলতে! এতো রাতে কিভাবে আসতে?
চাঁদকে যতই রাহু গ্রাস করুক না কেন! আলো ছড়ানো বাদ দেয়কি কখনো দেখেছ! আমার আত্মা যতদিন আছে আমি মিশে রব তোমার সাথে তেমনি। আলো ছড়াব তোমার এই অগোছালো আত্মায়।
হা হা হা হা হা...
শোনো হে ফাগুন সূচনার হাওয়া
শোনো হে বনলতা, কীটপতঙ্গ, পশু পাখি
শোনো আমার কৃষ্ণচূড়ার কথা!
কলিজায় বেঁধে রেখে রোজ আমাকে দেয় বকা।
আমি অধম, আমি অগোছালো মানব পুরুষ
আমাকে ভালোবেসেছে কৃষ্ণচূড়া
তাইত বলি বারবার কেনো মৃত্যুমুখী হয়েও ফিরে আসি
বুঝিনি তার অতল ভালোবাসার চাদরে আমি মোড়া!
কে ভালোবাসে তোমাকে! একটুও না! বদমাশ একটা... থাকো তুমি আমাকে আর পাবেনা....( চলে গেল হৈম)
সে আকাশ পানে তাকিয়ে প্রাণখোলা হাসিতে ভরিয়ে দিল প্রকৃতি। অবাক হয়ে দেখল সকলে চেয়ে।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম