কাজী নাসিরের ” শেষ চিঠি “

শেষ চিঠি
হেমন্ত রাগ করে শীতের সাথে আর কথা বলে না।
শীতের বন্ধু শিশির,বিন্দু তাদের পেছনে লেগেই আছে, একটু যদি রাগ ভাঙাতে পারে!
ওরা কতো করে যে বুঝালো, “দেখ দেখ হেমন্ত আর আসবে না। দেখ ওর চোখে টলমল করছে জলে,ওকে যেতে দিস না, তুই ফেরা ওকে! দিব্যি, ও আর ফিরে আসবে না, দেখ পেছনে ফিরে দেখ!”
“আমরা আর কি করবো বল, তোরা একসাথে সংসার করতে চাস না, এটা আমাদের বলে দিলেই তো পারিস, খামোখা আমাদের এতো মেহনত সব বৃথা গেলো।”
হেমন্ত হাউমাউ করে শীতকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“হয়তো আর দেখা হবে না, যেটুকু সময় তোমার পাশে ছিলাম তোমার মতো করে সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করেছি। হয়তো তোমার মতো করে সম্পূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পারিনি! আর কোনোদিনও বলবো না-চলো না, আজ বসন্তের হিমেল হাওয়ায় একটু হেঁটে আসি! কিন্তু ভাবিনি বসন্তের পবনে তোমায় চির বিদায় জানাবো, ভাবতে ও পারিনি। ভালো থেকো শীত। ভালো থেকো শিশির,বিন্দু।”
কয়েকটা পোশাক হাতে ব্যাগ নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে, রোগা মুখটা কুহেলিকার চাদর গায়ে বেরিয়ে পরলো হেমন্ত। সেদিনের পর থেকে হেমন্তকে আর কোনোদিন দেখিনি। শুনেছি সেদিন ফিসফিস করে কানের ধারে হেমন্ত বলেছিল,” আমায় হারাতে দিও না, খবরের কাগজে ছেঁয়ে যাবে!”
এক এক করে ছ’মাস কেটে গেলো। হেমন্ত আর শীত কাউকে আর খুঁজে পেলাম না, কিছুদিন পর টেলিভিশনের হেড লাইনে, “পর্বতারোহী বাংলাদেশী তরুণ হেমন্ত নিখোঁজ! দীর্ঘদিন ধরে হেলিকপ্টার টহলেও মেলেনি হদিস।”
পর্বতারোহী দলের ভারতীয় এক বাঙালির সাথে হেমন্তের বেশ কথা হতো । সে সংবাদকর্মীকে একটি নোটপ্যাড দেয়, যার সমস্ত পৃষ্ঠা খালি ছিল, শেষ পাতায় লেখা ছিল –
” তুমি আমায় খুঁজনি, তাই আমায় বুঝতে পারনি!”
ইতি
ফেলে আসা
হেমন্ত।
