গল্প: ঝুলন্ত একটা ব্রীজে পা ঝুলিয়ে বসে আছি একা

ঝুলন্ত একটা ব্রীজে পা ঝুলিয়ে বসে আছি একা। নিচে গভীর খাদ, উপরে পরিষ্কার নীলাভ আকাশ, সামনে একটা অসম্ভব সুন্দর ঝর্না বইছে। ঝর্নাটা কেনো এত সুন্দর লাগছে জানেন?
– ঝর্ণাটার পানির ফোঁটাগুলো পাথরকে যখন আঘাত করছে, খুব সুমধুর শব্দ তখন আমার কানে বাজছে, কান যেন আমার মস্তিষ্ককে জানান দিচ্ছে, “আহা! শান্তি পেলাম।” পাথরের গা স্পর্শ করে কিছু ফোঁটা আবার গাছের পাতাগুলোতে আঘাত হানছে। কিছু ঝটকা হাওয়া পাতায় পড়া ফোঁটাগুলোকে আমার শরীরে ছিটকে দিচ্ছে। ছোটবেলায় নানুবাড়ির মরিচা খালটায়, নানুকে কোনোরকম ফাঁকি দিয়ে যখন সবাই মিলে লাফিয়ে নেমে একে অন্যের গায়ে পানি ছিটিয়ে “বৃষ্টি বৃষ্টি” খেলতাম ঠিক তেমন লাগছে ঝর্নার পানির ছিটকাগুলো। ঝর্নাটার আশ্রয়ে কত গাছপালা, অণুজীব, পশুপাখি স্বাচ্ছন্দে বেঁচে আছে। কিন্তু ঝর্নাটা নিজে তার আনন্দকে ত্যাগ করে কত সাবলীলভাবে গভীর খাদে ঢলে পড়ছে। এতে তার কোনো বিষাদ নেই, বরং পরম সুখে যেনো আছে সে। তাই ঝর্নাটাকে এত সুন্দর লাগছে আমার। আশেপাশে নানা রংবেরঙের পাখির আনাগোনা। হঠাৎ, দুটো পাখির কথা আমার কানে আসছে,
–“দেখ এই মেয়েটা কেমন পা ঝুলিয়ে এই নির্জনে বসে আছে! একটু ফসকে গেলে তো খাদে গিয়ে পরবে, একটুও ভয় করছেনা ওর! মুখটাও কেমন ফ্যাকাশে হয়ে আছে দেখ, নিশ্চয়ই মেয়েটার কিছু হয়েছে।”
আমি কেমন যেনো বোকা হয়ে গেলাম। পাখির কথা আমি বুঝব কিভাবে! কিন্তু আমি তো স্পষ্ট কথাগুলো শুনছি।
হঠাৎ, মেঝ ভাইটা এসে আমাকে ডাকল, পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বললো, “ঈশা নে, একটু পানি খেয়ে নে, দোকানে অনেক ভিড় ছিল, আজ তো শুক্রবার। তাড়াতাড়ি যেতে হবে, নাহয় নানুর শেষ মুখটাও দেখা হবেনা। ফয়সাল ভাইয়া কল দিল, ওদিকে সবাই চলে গেছে, বিকাল ৩ টায় জানাযা। ২ টার মধ্যে আমাদের যেতে বলেছে।” আমার পেটে আর পানি গেলনা। চোখে মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে কল্পনা থেকে বের হয়ে বললাম, ” হে চল যাই, শেষ দেখা দেখে আসি।”

