কবি কালের লিখন এর ” উটকো অতিথি “

উটকো অতিথি
কালের লিখন
মুখে বলছি গণতন্ত্র, অথচ—
আমরা পরিবারতন্ত্রেই ফিরে যাই অবশেষে।
আমাদের বসবাস রাজতান্ত্রিক দেশে।
জ্ঞানীগুণী বিদ্যান অনেকেই জন্মান
আমাদের দেশটায়;
আছেন অনেক রত্নগর্ভ মাতা।
আমাদের দেশে এখন প্রজনন বন্ধ,
জন্মায় না কোনো নেতা।
নেতার ছেলে নেতা, মন্ত্রীপুত্র মন্ত্রী!
পদ-পদবী জন্মসূত্রেই পাওয়া;
ক্ষমতার চেয়ারে বসে—
ক্ষমতা ভালোবেসে, ক্ষমতায় ভেসে যাওয়া।
এক পরিবার ক্ষমতায় আসে,
দেশকে নিজের মতো সাজায়,
অন্যজন আসে—
আগেরজনের ভাবনার বারো’টা বাজায়।
যেন আমাদের এইদেশ—
সেইসব পরিবারের ড্রয়িংরুম!
ওদের খেয়ালযন্ত্র আমরা জনগণ!
যেনো রাজার দেশে থাকি আমরা,
আমরা ওদের মামুলী বিনোদন!
ওরা কৃষকের লাভ খায়,
শ্রমিকের রক্ত খায়—
আমার বোনেদের গার্মেন্টসে কমটাকায় খাটায়,
ওরা টাকার পাহাড় বানায়,
বাড়ি-গাড়ি বিত্ত-বৈভব,
কোথায় তারা পায় এতসব?
সব আমাদের টাকা, আমাদের দেশ,
আমাদের সম্পদ, আমাদের ভালোবাসা।
ওদের দেশপ্রেম নেই, ওরা রক্তচোষা!
সালমার মা’র অপারেশন হচ্ছে না।
কামালের বোন খেতে পাচ্ছে না,
হিরণের চাকরী নেই অনেকদিন।
বৃদ্ধা মা বাজারের বেঞ্চে ঘুমায়,
এইসব নিগৃহীত জনগণ এদেশের মালিক!
অথচ এদের ঠুকরে খেয়ে—
ঢেঁকুরতোলে ক্ষমতার শালিক!
পরিবারে কুক্ষিগত দেশের শাসনভার!
আমরা সবাই প্রজা,
তোমরা রাজার রাজা,
কী দরকার আর ভোট দেবার?
কারও এটা বাপের দেশ,
কারোওবা স্বামীর,
আমাদের কোনো দেশ নেই,
আমরা উটকো অতিথি!
আমাদের কণ্ঠে তাই বিদ্রোহ নাই,
আছে মিনমিনে মিনতি!
যেন তোমাদের পোষ্য আমরা, দয়ায় নাচি!
আমাদের নেতা নেই, নেতৃত্ব নেই,
রাজারাণী আছে; আমরা সবাই আশ্রিত হয়েই বাঁচি!
