5:05 AM, 13 November, 2025

সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী’র অণুগল্প “আলোর রথ”

inbound4886560055069045041

আলোর রথ

সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

আলোর রথটি সব বাড়ির দরজায় একবার করে থামছিলো , চালককে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে নামার দরকার নেই যে স্বেচ্ছায় এসে বসবে ,তাকেই আনবে । আলাদা কোনো আগ্রহ দেখানোর দরকারই নেই কারন ইতিমধ্যেই প্রয়োজনের তুলনায় ব্যবস্থা কম ।কর্মচারীরা সর্বক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকছেন অতিথি দের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য যোগান দিতে । ঊর্ধলোক বলে কথা ,একটা সুখ্যাতি এতদিন সকলে জেনে এসেছে তার অন্যথা হতে দেওয়া চলে !

একেকটা বাড়ির সামনে চালক নিয়মরক্ষার জন্য দাঁড়াচ্ছিল বটে কিন্তু পলকমাত্র ।বাড়ির চেহারা দেখলেই বোঝা যায় এই বাড়ি থেকে যাত্রী উঠলে আর ফিরবার নাম করবে না । কিন্তু ঊর্ধলোকের নিয়ম অনুযায়ী ভারসাম্য রাখতেই হবে , জন্ম মৃত্যু সমান সমান । অর্থাৎ যতজনকে নিয়ে যাবে ততজনকে আবার ফেরাতে হবে এবং এইক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করার প্রশ্নই নেই । জন্মমৃত্যুর চক্রে লাট খেতে খেতে একদিন পঞ্চভূতের আঁটন যাবে ছেড়ে অমনি মহাশূন্যে ফুস্ , তারপর থাকো তারা হয়ে যতদিন জ্বলতে পারো । সে বিশাল জায়গা , স্থান সঙ্কুলানের কোনো সমস্যা নেই ।

মর্তে এক রোগ আসাতে ইদানিং ভারসাম্য রাখা দুষ্করই , অতিরিক্ত অনেক রথের ব্যবস্থা করতে হয়েছে আর তাতে ব্যাজারমুখো যাত্রীর সংখ্যাই বেশি ।এই অনিচ্ছুক অতিথিদের নিয়ে কর্মকর্তাদের নাস্তানাবুদ অবস্থা ।এই বিশেষ আলোর রথটি তাই বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পাঠানো হয়েছে , যদি কেউ স্বেচ্ছায় আসে সানন্দেও । চালক জানেন ..এমন টা সাধারণত হয় না , সকলেই ফিরিস্তি দেয় অসমাপ্ত কর্মের না মেটা ইচ্ছের না পূর্ণ হওয়া স্বপ্নের ।

একজন উঠলেন অবশেষে , মুখ ঘুরিয়ে চালক দেখলো বৃদ্ধ , নাম নারায়নরাও দাভারকর । হাসিমুখে বললেন , ” অক্সিজেন সিলিন্ডারটা ওকে ছেড়ে দিয়ে এলাম , ছেলেটা যুবক ওর আরো বেশিদিন বাঁচা দরকার ।আমি যথেষ্ট বেঁচে নিয়েছি ….চলো হে !”

আলোর রথের চালক নিশ্চিন্ত হলো , এমন যাত্রীরই তো অপেক্ষা ছিল তার , সে এবার উড়ে যেতে পারে সেই আলোর দেশে ..ঊর্ধলোকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *