2:11 PM, 13 November, 2025

কাশ্মীরের ভেতর থেকেও কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে!

kashmir_16

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ এই মুহূর্তে ঠিক হচ্ছে কাশ্মীরে? তার সঠিক তথ্য বাইরের দুনিয়ার মানুষের কাছে নেই। এমনকি ভারতীয় গণমাধ্যম থেকেও সেখানকার কোনো স্পষ্ট খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কাশ্মীরের এক শহর থেকে ফিরে ইনডিয়ান এক্সপ্রেসের এক সাংবাদিক জানালেন কাশ্মীরের ভেতর থেকেও কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে!

এদিকে বিবিসি’র এক সাংবাদিক জানালেন এই কড়া নিয়ন্ত্রণের মাঝেও পাথর ছুড়ে মেরে কেউ কেউ বিক্ষোভ করার চেষ্টা করছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইনডিয়ান এক্সপ্রেসের সহকারী সম্পাদক মোজাম্মেল জলিল ৬ আগষ্ট রাতে কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে দিল্লীতে ফেরেন। তিনি দিল্লীতে ফিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংক্ষেপে তুলে ধরেন সেখানকার পরিস্থিতি।

জলিলের ভাষায়, কাশ্মীর এখন সৈন্য আর তারকাটার ব্যারিকেডের শহর। কাশ্মীরের ভেতর থেকেও মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কেউ কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি ১৮৪৬ ব্রিটিশদের কাশ্মীর দখলের সময়কার পরিস্থিতির সাথে তুলনা করেছেন।

জলিল লিখেছেন,  ‘সবে মাত্র শ্রীনগর থেকে দিল্লি এসে পৌঁছেছি। পরিস্থিতি এখন ১৮৪৬ সালের চেয়েও খারাপ অবস্থা। শ্রীনগর সৈন্য এবং কাঁটাতারের ব্যারিকেডের এক শহর। গতকাল ( ৫ আগষ্ট) পেরাইপোড়া থেকে অফিসে (রেসিডেন্সি রোড) পৌঁছাতে আমার তিন ঘন্টা সময় লেগেছে। ফোন – মোবাইল এবং ল্যান্ডলাইন – সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ আছে। এটিএম বুথ গুলিতেও কোনো টাকা নেই। কাশ্মীরজুড়ে খুব কঠোর কারফিউ জারি রয়েছে ।

খুব কঠিন পরিস্থিতির ভেতর শ্রীনগরের শহরের অল্প কিছু এলাকাতে ঘোরাফেরা করতে পেরেছি। শহরের একটি ছোট অংশ ছাড়া এর বাইরের আর কোনো তথ্য নেই আমার কাছে। তবে, শুনেছি পুরানো শহর বড়মুলায় বিক্ষোভ হয়েছে। এখানে যাদের সাথেই আমার দেখা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই ছিলো হতবাক। সবার ভেতরই এক ধরনেরও অদ্ভুত অসাড়তা দেখা গেছে। আমরা শুনেছি প্রতিবাদ করায় দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারিনি কোনো দায়িত্বশীল ‍সূত্র থেকে। এ তথ্য নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় আপাতত নেই।

কাশ্মীরের ভিতরেও কাশ্মীরকে অদৃশ্য করে তোলা হয়েছে। সাংবাদিকদের সেনাদের নির্দেশিত নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমি রাজারবাগ থানার বাইরের এক হোটেলের ভেতর থেকে দেখেছি এক টিভি সাংবাদিক বলছেন (সংবাদ উপস্থাপন করছেন)- কাশ্মীর এখন শান্ত আছে!’

এদিকে বিবিসির সাংবাদিক পীরজাদা জানিয়েছেন, ‘ কাশ্মীর এখন রাগে ফুসছে। শ্রীনগর এবং কাশ্মীরের উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর ছোঁড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সরকারিভাবে এসব খবরের কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায় নি।

রাস্তায় সর্বত্র হাজার হাজার সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী টহল দিচ্ছে। সকল রাস্তা বন্ধ। সবখানে জারি হয়েছে কারফিউ। কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। ল্যান্ড ফোন, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্লক করে দেয়া হয়েছে।’

অন্যদিকে এখন যেসব কাশ্মীরি জনগণ পেশাগত ও শিক্ষাগতসহ নানা কারণে কাশ্মীরের বাইরে অবস্থান করছেন তারা আছেন উৎকণ্ঠায়। নানা ধরনের গুজব শুনতে পাচ্ছেন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। কিন্তু কোনো তথ্য সম্পর্কেই কেউ নিশ্চিত হতে পারছে না। কি হচ্ছে সেখানে।

ভারতীয় অনুচ্ছেদের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা হরণ করা হয়েছে। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হওয়ার যেই শর্তে ভারতের সাথে যুক্ত হয়েছিলো সেই শর্তগুলোর বিলুপ্তি ঘটছে। যা জুম্মু-কাশ্মীরের জণগণের ভেতর ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি করেছে। যেকোন উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে মোদি সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে বিপুল পরিমান সেনা মোতায়েন করছে কাশ্মীরে।