খালি পেটে লিচু খেয়ে ভারতের বিহারে ১০৩ শিশুর মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের বিহার প্রদেশে অজ্ঞাত মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শিশু মৃত্যুর এ ঘটনায় বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে ওই প্রদেশে। মস্তিষ্কজনিত এ রোগের সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ফল লিচুর সম্পর্ক থাকতে পরে বলে মনে করছেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয়ভাবে ‘চামকি বুখার’ নামে পরিচিত এ রোগ তৃতীয় ধরণের মারাত্মক। ফ্রান্স ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এজেন্সি ফ্রান্স-নিউজ (এএফপি) এমন খবর প্রকাশ করেছ।
এ বছর দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ বিহারের মোজাফফরপুরে ১০ এবং তার চেয়ে কম বয়সী ১০৩ শিশু একিউট এনসেফালিটিস সিনড্রোম (এইস)’এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া অনেক শিশু স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর দেশটিতে গ্রীস্মকালে এবং সাধারণভাবে লিচুর সময়ে সব সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০১৪ সালে এই রোগে সেখানে শিশু মৃত্যুর রেকর্ড সংখ্যা ১৫০ জন। অন্যান্য বছরে মৃত্যুর সংখ্যা সেই তুলনায় কম।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকগণ বেশ কয়েক বছর আগে জানিয়েছিলেন, গ্রীস্মকালিন লিচুর ভেতরে থাকা এক ধরণের বিষাক্ততা এ মস্তিস্ক রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ অসুস্থতার কারণ নির্ণয়ে আরো বেশি গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে বলে মতামত দেন তারা।
মঙ্গলবার প্রদেশটির বেশ কিছু সংখ্যক লোককে কর্তৃপক্ষের স্থবিরতা ও অযত্নের অভিযোগ নিয়ে মোজাফ্ফরপুরের প্রধান হাসপাতালের বাইরে ভীড় করতে দেখা গেছে।
রবিবার (১৬ জুন) এ বিষয়ে নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন চলাকালে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাওয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ নিয়ে এক টুইটার বার্তায় বিরোধী দলীয় কংগ্রেস নেতা রণদীপ সূর্যবালা মন্তব্য করেছেন, ‘বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিশু মৃত্যুর চেয়ে ক্রিকেট স্কোর নিয়ে অধিক উদ্বিগ্ন।’
অপর বিরোধী দলীয় নেতা রাবরি দেবী শিশু মৃত্যুকে, ‘ঠান্ডা মাথার খুন’ বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও ‘ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে শিশুরা মারা যাচ্ছে’ বলে নিজ টুইটারে টুইট করেন তিনি।
মঙ্গলবার বিহারের সরকারি হাসপাতাল শ্রীকৃষ্ণ মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেন প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, যেখানে বেশিরভাগ শিশুই মারা গেছে।
গণমাধ্যমকে ভেতরে প্রবেশের ও অসুস্থ শিশুদের পরিবারের সদস্যদের বহিরাঙ্গণে গোলোযোগ সৃষ্টির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ও প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে এ রোগ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন ও সচেতনতা কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে।
মঙ্গলবার হিন্দু পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, কিছু দূরদর্শীতা ও প্রারম্ভিক যত্নে অতি সহজেই মৃত্যু কমিয়ে আনতে পারে। ২০১৪ সালে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ দলের হস্তক্ষেপে শতকরা ৭৪ ভাগ শিশুর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। চলতি বছর সরকার এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও এখানে উল্লেখ করা হয়।
ভারতের দরিদ্রতম প্রদেশগুলোর অন্যতম বিহারের জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। সম্প্রতি সেখানে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার বয়ে গেছে। সেখানকার দরিদ্র পরিবারের শিশুরা পেটপুরে খেতে পায় না, ফলে তারা খালি পেটে লিচু খেয়ে মস্তিস্ক রোগের শিকার হয়।
