গাজা বিক্ষোভের বর্ষপূর্তিতে হাজারো বিক্ষোভকারীর সমাবেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে গত বছরের মার্চে গাজায় ফিলিস্তিনিরা যে বিক্ষোভের শুরু করেছে তা এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ‘গ্রেট রিটার্ন’ নামে পরিচিত ওই বিক্ষোভের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের নিরপেক্ষ অঞ্চলে জড়ো হন।
শনিবার গ্রেট রিটার্ন বিক্ষোভ এক বছর পূর্ণ করে। এসময় উপস্থিত হাজার হাজার ফিলিস্তিনির হাতে ছিল প্যালেস্টাইনের পতাকা। ১২ বছর ধরে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ গাজাবাসীর উপর যে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে তার অবসান চেয়ে স্লোগান দেন তারা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। তবে এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুর সংবাদদাতা।
এদিকে বিক্ষোভকারীরা যেন ইসরায়েল সীমান্তের খুব কাছে না যায় সেটা প্রতিরোধ করার জন্য ডজনখানেক স্বেচ্ছাসেবীও উপস্থিত ছিলেন গাজা সীমান্তে। এছাড়া সেখানে নির্মিত অস্থায়ী ক্লিনিকের সামনে লাইন ধরে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে।
বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়ার জন্য ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে যথারীতি ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনীকেও দেখা গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলে ১৭ বছর বয়সি আদহাম আমারা নামে একজন বিক্ষোভকারী নিহত হন। এছাড়া ৩৩ জন বিক্ষোভকারী ইসরায়েলিয়েদের ছোড়া গুলির আঘাতে আহত হয়েছেন। এর আগে মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, শনিবার সকালে ২১ বছর বয়সি মোহাম্মদ জিহাদ সাদ নামে একজন নিহত হন। ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে ছোড়া বোমার আঘাতে মারা যান তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে গাজার নয়জন বাসিন্দা আহত হন।
এদিকে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং মিশরীয় নিরাপত্তা প্রতিনিধি পূর্ব গাজার বিক্ষোভস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ হয় বলে জানা গেছে।
আনাদোলুর সংবাদদাতারা জানান, রামাল্লা, নাবলুস, আল বিরেহ অঞ্চলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং সত্যিকারের বুলেট ব্যবহার করে।
অবশ্য শুক্রবার হামাস সতর্ক করে বলেছিল বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি যেকোন ব্যবস্থার সমান প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চের শেষদিকে গ্রেট রিটার্ন বিক্ষোভের ডাক দেয় গাজা শাসন করা দল হামাস। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সেই বিক্ষোভে সমবেত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সারা বছরজুড়ে প্রতি সপ্তাহে গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিল। তাদের এই নির্মমতার ফলে গত বছর প্রায় ২৭০জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিরীহ বিক্ষোভকারীদের প্রতি ইসরায়েলি সেনাদের এই বর্বর আচরণে জাতিসংঘও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। চলতি বছর সংস্থাটি জানায়, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অপরাধে বিচার করা হবে।
