বলিভিয়ার বিরোধীদলীয় সিনেটর জেনিন আনেজ নিজেকেই দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন। ১৩ নভেম্বর, মঙ্গলবার কংগ্রেসে কোরাম সংকটের মধ্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। সেনাবাহিনীর চাপে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের বামপন্থী দলের আইনপ্রণেতাদের পার্লামেন্ট বয়কট করায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।
জেনিন আনেজের এই ঘোষণার পর বলিভিয়ার রাজপথে বিক্ষোভ আরো জোরাদার হয়েছে। মোরালেসের সমর্থকরা কংগ্রেস ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি ও আল জাজিরা এমন খবর প্রকাশ করেছে।
চলতি বছরের ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে তৈরি হওয়া অসন্তোষের জেরে গত ১০ নভেম্বর, রবিবার সেনাবাহিনীর চাপের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বলিভিয়ার প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস। পরদিন তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দেয় মেক্সিকো। ১৩ নভেম্বর, মঙ্গলবার তিনি মেক্সিকোয় পৌঁছালেও রাজনৈতিক লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
মোরালেসের পদত্যাগের পর প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সাংবিধানিকভাবে যোগ্য সবাই পদত্যাগ করেন। ফলে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা।
দেশটির সংবিধান অনুসারে, মোরালেসের পদত্যাগ কার্যকর করতে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের অনুমোদন পেতে হবে। আইনগতভাবে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হতে হলেও সিনেটের অনুমোদন লাগবে। মঙ্গলবার মোরালেসের অনুগত আইনপ্রণেতারা সিনেটে যোগ না দেয়ায় অধিবেশন বসার জন্য প্রয়োজনীয় কোরাম পূর্ণ হয়নি।
এমতাবস্থায় নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন সিনেটর জেনিন আনেজ বলেন, ‘মোরালেসের অনুসারীরা এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আর বলিভিয়ায় রাজনৈতিক শুন্যতা চলতে পারে না।’ তিনি দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার সারিতে ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে শিগগিরই নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
জেনিন আনেজের এমন ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে তাকে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারী ডানপন্থী সিনেটর আখ্যা দিয়েছেন ইভো মোরালেস। এক টুইট বার্তায় তিনি এই ঘোষণাকে ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্য, গোপন অভ্যুত্থান বলে মন্তব্য করেন।
জেনিন আনেজের ঘোষণার পর রাজধানী লা পাজের মূল কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করে মোরালেসের অনুসারীরা। তবে তাদের আটকে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। আকাশে টহল দিতে দেখা যায় সামরিক বিমান। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা ‘আমরা ভীত নই’ স্লোগান দিতে থাকে।
মারিয়া আপাসা (৩৫) বলেন, ‘ইভো আমার কাছে ছিলেন বাবার মতো। আমাদের কণ্ঠস্বর ছিল, অধিকার ছিল।’
এদিকে মোরালেসের পদত্যাগের পর ১১ নভেম্বর, সোমবার এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে অন্য আঞ্চলিক নেতাদের জন্যও সতর্কবার্তা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এটি ভেনেজুয়েলা ও নিকারাগুয়ার অবৈধ শাসকদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা। গণতন্ত্র ও মানুষের আকাঙ্ক্ষাই বিজয়ী হবে। ইভো মোরালেসের বিদায়কে বলিভিয়ার গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধশালী ও পশ্চিমমুখী অভিযাত্রা হিসেবেও আখ্যায়িত করেন ট্রাম্প।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম