ভারতে পুষ্টির অভাবে মৃত্যু হয় ৬৯ ভাগ শিশুর

ভারতে প্রতি বছর পুষ্টির অভাবে প্রায় ৬৯ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়। যাদের সবার বয়স পাঁচ বছরের নিচে। এছাড়াও পুষ্টির অভাবে অধিকাংশ শিশুই নানা ধরনের জটিল রোগে ভোগে। আর ২১ শতাংশ শিশুর খাদ্যতালিকায় বিবিধ এবং সুষম আহারের যথাযথ সমন্বয় ঘটে।
ইউনিসেফ’র ‘দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন- ২০১৯’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। ভারতের গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন এমন খবর প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দেশটিতে ‘বড়দের’ হাইপারটেনশন, কিডনির জটিল রোগ, মধুমেহ-সহ অনেক রোগ রয়েছে। মহিলাদের স্বাস্থ্যের চিত্রটা আরো খারাপ। ভারতে প্রতি দু’জন মহিলার মধ্যে একজন রক্তাল্পতায় ভোগেন বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়স যে শিশুদের, তাদের প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজনের শরীরে ভিটামিন এ’র ঘাটতি দেখা যায়। প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজনের শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাব রয়েছে। প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে দু’জন ভোগে রক্তাল্পতায়। ‘মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস’র অভাবে রিকেট, রাতকানা এবং অন্ধত্বেরও ঘটনা ঘটে।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজের পুষ্টিবিদ্যার অধ্যাপিকা গার্গী বোসের বিশ্লেষণ অনুসারে, ‘আট মাস বয়সের পর শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির সমস্যা বাড়ে। এর ফলে মৃত্যুও হয়। এর প্রধান কারণ, ওই বয়সে মাতৃদুগ্ধ পান করার অভ্যাস ছাড়িয়ে শিশুকে বাহিরের খাবার দেয়া হয়। কিন্তু বহুক্ষেত্রেই এই খাবার পরিমাণেও যথেষ্ট হয় না, আবার পুষ্টির নিরিখেও যথাযথ হয় না। কারণটা মূলত দারিদ্র্য ও অশিক্ষা ছাড়াও পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতার অভাব।’
গার্গী বোসের বিশ্লেষণ অনুসারে আরো জানা যায়, ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পরিষ্কার জলের অভাব, টীকা না দেয়ার ফলে সংক্রমণের শিকার হওয়াও সমান দায়ী। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বলতে গেলে অপুষ্টি-অশিক্ষা-দারিদ্রের একটি দুষ্টচক্র কাজ করছে শিশুমৃত্যুর পিছনে। এছাড়াও সমাজের যে অংশে দারিদ্র্য এবং অশিক্ষার হার বেশি, সেখানেই মহিলাদের বেশি অপুষ্টিতে ভুগতে দেখা যায়। এর কারণ কম বয়সে বিয়ে, কৈশোরকালীন মাতৃত্ব, একাধিকবার গর্ভবতী হওয়া প্রভৃতি। আর মা অপুষ্টিতে ভুগলে সন্তানের অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তো থেকেই যায়।’
এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বিষয়ে গার্গী বোস বলেন, ‘সবার আগে যেটা জরুরি, সেটা হল সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। শিশুদের তোলা খাবার কেমন হতে পারে, তার সম্যক ধারণা দিতে হবে। বোঝাতে হবে যে, দামি প্যাকেটজাত খাবার না দিয়ে বাড়িতেই কীভাবে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেমন চাল, গম, বাদাম, অঙ্কুরিত ডাল হালকা ‘রোস্ট’ করে গুঁড়িয়ে রাখার পর, সেটাকেই ‘পরিজ’-এর মতো খাওয়ানো যেতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়াও পরিষ্কার জলের ব্যবস্থা করা, হাত ধোওয়া, খাবার ঢেকে রাখা, টিকা দেয়া এসব অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বহু চেষ্টার পর আমাদের দেশে আয়োডিন যুক্ত লবণ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তার বার্তা দেয়া গিয়েছে। তার সুফলও দেখা যাচ্ছে। সেভাবেই আরো উদ্যোগ নেয়া জরুরি। আর দেখতে হবে, সমাজের সব স্তরের মানুষ যেন এসবের সুবিধা পায়। খাদ্যের অপচয় যেন বন্ধ হয়। তবেই অপুষ্টি রোধে কিছুটা হলেও সাফল্য আসবে।’
