আর কতদিন অরক্ষিত রেলক্রসিং?

মো: তৌহিদুর রহমান তাহসিন: প্রায় রেলক্রসিংয়ে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের উলাপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় একটি মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। মাইক্রোবাসটি একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বর-কনে নিয়ে ফিরছিল। এমন ঘটনা দুঃখজনক। সিরাজগঞ্জের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে বৈধ ও অবৈধ রেলগেট।
অবৈধ তো বটেই বৈধগুলোর অনেকটিতেই নেই গেটম্যান। ফলে অরক্ষিত ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে চলেছে। অথচ এগুলো সুরক্ষিত করার কোনো তাগিদ নেই। জানা যায়, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পদ্মা ট্রেনটি দ্রুতগতিতে সলপ রেলস্টেশন হয়ে যাচ্ছিল। ঠিক এ সময় রেলস্টেশনের আধা কিলোমিটার উত্তরে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং দিয়ে মাইক্রোবাসটি রেললাইন পার হচ্ছিল। রেললাইন পার হওয়ার আগেই ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়।
ট্রেনটির ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ে। মুহূর্তে বর্ণহীন হয়ে গেল সব উৎসব, সব আয়োজন। অরক্ষিত রেলক্রসিং কেড়ে নিল সুমাইয়া ও রাজনের জীবনের সব স্বপ্ন। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৮৭৮ কিলোমিটার রেলপথে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টি। এই অবৈধ ক্রসিংগুলো পুরোপুরিই অরক্ষিত।
এগুলো দিয়ে পারাপার, রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচলসহ নানা কারণে প্রতি বছর গড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এটাই যখন বাস্তবতা, তখন রেল কর্তৃপক্ষের করণীয় কি? এসব দুর্ঘটনা, প্রাণহানির দায় কার? দেশে রেলপথে রেলক্রসিং স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ, অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করার দায় আইনত কোন কর্তৃপক্ষের?
বর্তমান বাস্তবতায় তাদের ভূমিকা কী। রেল সমপ্রসারণ ও আধুনিকায়নে বহু প্রকল্প গ্রহণের কথা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু রেলের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা রেলক্রসিং সুরক্ষিত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে গেটম্যান নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা কেন? আর অবৈধ রেলক্রসিংগুলোর ব্যাপারে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা এগুলো স্থাপিত হয়।
কিন্তু এগুলো অরক্ষিত মৃত্যুফাঁদ হয়ে তো থাকতে পারে না। অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কথাও শোনা যায়। অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের ব্যাপারে আইন কী বলছে তা আমরা জানি না। তবে না জেনেও আমরা বলতে পারি, এসব ক্রসিংকে ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। রেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে রেলক্রসিংগুলোকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে।
বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে অবশ্যই গেটম্যান থাকা নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে নেই সেখানে দ্রুত নিয়োগদানের ব্যবস্থা করতে হবে। অবৈধ রেলক্রসিংগুলো আইনানুগভাবে বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে, নেহাত বন্ধ করা না গেলে যথাযথ অবকাঠামো ও গেটম্যান দিয়ে এগুলো সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে রেলগেট মরণফাঁদ হয়েই থাকবে, যা আমাদের কারো কাম্য হতে পারে না। রেলে নিরাপত্তার দিকটি অবশ্যই যথাযথ গুরুত্বসহ দেখা দরকার।
