9:52 PM, 12 November, 2025

আমাদের রঙিন ঈদ-রেহনুমা লাবণ্য

inbound2530236666360548257

এই পর্যন্ত খুব সম্ভব ৩২-৩৪ টা ঈদ পেয়েছি।তার মধ্যে আমার ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ঈদগুলোই ছিলো সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ।তখন ছিলো আমার সোনায় মোড়া চকচকে রঙিন দিন।

ঈদের চেয়ে আনন্দ অন্য কিছু হতেই পারে না এটা আমাদের কাছে যেন চিরাচরিত বিশ্বাস ছিলো।ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে যেত ঈদের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই।সবার কাছে আকর্ষণীয় থাকতো তাদের নিজ নিজ জামা আর মেহেনদী।জামা ছাড়া ঈদের আনন্দটা কেমন যেন পানসে মনে হতো।আমাদের সকলের সব আয়োজন শুধুমাত্র ওই একটা দিনের জন্য হয়ে থাকে।

ছোটবেলায় বেশিরভাগ সময় আম্মুই জামা কিনে এনে দিতো।জামার অপেক্ষায় ঘুমিয়ে থাকতাম। ঘুম থেকে উঠেই যেন দেখি নতুন জামা হাজির।নতুন জামাকাপড়েরও তখন আনন্দদায়ক একরকম ঘ্রাণ পেতাম।

আমাদের কাছে তখন সবচেয়ে মজার দিনই ছিলো ঈদের ঠিক আগের দিন অর্থ্যাৎ “চাঁদ রাত”।সেদিন সব পোলাপান নিয়ে আর আমরা তিনজন(স্বর্ণা,পাখি,আমি) বিকেলে চকের মাঝে পাটখুড়ি দিয়ে বুড়ির ঘর বানিয়ে আগুণ দিতাম।ঘরের মধ্যে আবার মাটি দিয়ে বুড়ো-বুড়ি বানিয়েও রেখে দিতাম। কি অদ্ভুত নিয়ম তাই না!তারপর সন্ধ্যায় ছিলো চাঁদ দেখার আরেক পর্ব।কোনোরকম ইফতার করে বাড়ির সামনের কাঁচা মাটির রাস্তার এককোনে গিয়ে চাঁদ দেখতাম বা না দেখতাম তবুও লাফাতাম আর সবাই একসাথে চিল্লাতাম- “চাঁদ উঠছে রে বা “লক্ষি দিকা চাঁদ উঠরে রে”।এরপর রাতে মেহেনদী দেয়া আর সবাই মিলে তারাবাতি জ্বালানোর ধুম পরে যেত।ছোটবেলায় আম্মুই মেহেনদী পড়িয়ে দিতো।আর বড় হওয়ার পর সারা গ্রামের পোলাপানদের মেহেনদী দিতে হয় আমার আর পাখির।তারপর আস্তে আস্তে কালো বর্ণ ধারণ করতে করতে অন্ধকার নেমে আসে।

ঈদের দিন খুব ভোরে স্বর্ণা,পাখি এসে আমার ঘুম ভাঙাতো।তিনজন গোসল-টোসল করে কে কত তাড়াতাড়ি রেডি হতে পারে সেই প্রতিযোগিতা ছিলো।নতুন জামাকাপড় পড়ে বের হয়ে যেতাম ঘুরতে।ঈদের দিন তেমন খাওয়া হতো না একটু আকটু খেয়েই দিন পাড় হয়ে যেত ঘুরতে ঘুরতে।
সবসময় আমার দাদা-দাদির সাথে গ্রামেই ঈদ করতে হয়।গত কয়েকবছর আগেও ঈদ বেশ মজার ছিলো।কিন্তু স্বর্ণা,পাখির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আমার ছোটবেলার ঐ আনন্দগুলো করা আর হয়ে ওঠে না।তবে আমার মনে হয় আমরা বড় হলেও কি মনের ওপর সব নির্ভর করে। এখনও চাইলেই সেই বাচ্চাকালের ঐতিহ্য ধরে রাখা যায়।সেটা একটু অন্যরকম হবে হয়তো।কিন্তু সম্ভব।এতে আমরা বৃদ্ধ হয়ে গেলেও মনে প্রাণ থাকলে তা সম্ভব।

“সময়ের সাথে সাথে আমাদের বয়স বাড়লেও মনের বয়সটা আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে।
আমাদের ঈদ আনন্দ অটল থাকুক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *