দিনমজুর থেকে দানবীর আব্দুল কাদির মোল্লা

নিউজ ডেস্ক:
মাত্র ৩৬০ টাকার জন্য এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তাঁর। জীবনকে পরিবর্তনের আশায় শূণ্য হাতে উঠে পড়েন ঢাকাগামী বাসে। কিন্তু ভাড়া না থাকায় বাসের হেলপার নামিয়ে দেন নরসিংদীর ইটাখলা বাসস্ট্যান্ডে। ইটাখলায় দাঁড়িয়ে থাকা ময়মসিংহ থেকে আসা দিনমজুরদের সাথে কামলা খাটেন অন্যের জমিতে। এখন তিনি দেশসেরা শিল্পপতি। কর্মসংস্থান করেছেন লাখো মানুষের। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কলেজ থেকে এখন বের হচ্ছে হাজার হাজার কৃতী শিক্ষার্থী। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ মানবিক সব কর্মকাণ্ডে তার আর্থিক অনুদানের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে।
বলছিলাম থার্মেক্স গ্রুপের কর্ণধার আব্দুল কাদির মোল্লার কথা। একজন আলোকিত মানুষের মডেল ও উন্নয়নের রূপকার। নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার পাঁচকান্দী গ্রামে ১৯৬১ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল কাদির মোল্লা। পিতার নাম আব্দুল মজিদ মোল্লা আর মাতার নাম নূরজাহান বেগম। ১৯৭৪ সালে ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় পিতা আব্দুল মজিদ মোল্লা মারা যান। চরম দারিদ্রতার মধ্যেও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে যান। কিন্তু মাত্র ৩৬০ টাকার জন্য এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হতে আয়ের লভ্যাংশের ২৫% ব্যায় করেন মানবকল্যাণে। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার ভিশন নিয়ে ১৯৯৫ সালে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন পাঁচকান্দি ডিগ্রি কলেজ। ২০০৬ সালে নরসিংদী শহরে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের নামে আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ। শুরু থেকেই বাজিমাত করে চলে প্রতিষ্ঠানটি। পরপর তিনবার দেশের মধ্যে ২য় স্থান। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা করেন স্ত্রীর নামে এনকেএম হাই স্কুল এন্ড হোমস এবং আব্দুল কাদির মোল্লা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এই প্রতিষ্ঠান চারটি মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন কর্তৃক সরাসরিভাবে পরিচালিত।
তিনি নরসিংদী জেলার প্রায় আড়াইশ’ স্কুল-কলেজে অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। অনেক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাতেও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। শতাধিক এতিমখানা তাঁর অনুদানে পরিচালিত হয়ে আসছে। তিন শতাধিক স্কুল-কলেজে মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন এর এফডিআর রয়েছে, যা থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেতনসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়।
এছাড়া তাঁর অর্থায়নে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রহল ছাড়াও মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। তাঁর অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত নরসিংদীর জেলার বেলাব বাজার জামে মসজিদে ১২ হাজার মানুষ একসাথে নামাজ পড়তে পারেন।
আব্দুল কাদির মোল্লা কাজে বিশ্বাসী। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টাই কাজ করেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে শনিবার দিন তিনি চিকিৎসা সেবা, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতাকে সহায়তা, বেকার যুবকদের অল্প পুঁজি দিয়ে ব্যবসায় সহায়তা, রিকশা-ভ্যান দিয়ে সহায়তা, বিধবা নারীদের সেলাই মেশিন, আবাসন ব্যবস্থা, টিউবওয়েল ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করে থাকেন।
কর্মবীর আব্দুল কাদির মোল্লা দেশসেরা করদাতা নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে কর বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
