2:04 AM, 13 November, 2025

মৌলভীবাজারে খাসিয়ারা হাট লবীনে ব্যস্থ আনন্দে ভাসছে পুঞ্জি পল্লীগুলি

IMG_20190331_124119
মোঃ শাহিন আহমেদ
বিশেষ প্রতিনিধি  মৌলভীবাজারঃ
……………………………………………
মৌলভীবাজার জেলার খাসিয়া পুঞ্জিগুলোতে  অগ্রিম আসা এসব পানের বেশ ভালোই দাম পাচ্ছেন পান চাষীরা৷মৌলভীবাজারের ৬টি উপজেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৬৫টি খাসিয়া পুঞ্জি (গ্রাম) পান পুঞ্জি রয়েছে। এসব পুঞ্জির খাসি নারী ও পান চাষীরা পান গুছানো ও বিপননের ব্যস্ত সময় পার করছেন৷
খাসি ভাষায় ‘হাট’ মানে তোলা আর ‘লবর’ মানে ছোট নবীন পাতা অর্থাৎ ছোট পাতা তোলা। হাট লবরের সময়কাল মধ্য এপ্রিল থেকে মে মাস। এই সময় নতুন ছোট পাতা গজায় কিন্তু এবার অগ্রিম বৃষ্টিপাত হওয়ায় আগেভাগেই নতুন পান এসেছে গাছে, আর সেই পান তোলার ধুম লেগেছে
খাসি জনগোষ্ঠীর জীবিকা আয়ের প্রধান উৎস খাসিয়া পান চাষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) ও বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের মহাসচিব ফিলা পতমী বলেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পান গাছ থেকে সম্পূর্ণ পান উত্তোলন শেষ হয়ে যায়। সময় মতো বৃষ্টি দিলে মে মাসের শেষ দিকে আবারও পান উত্তোলন শুরু হয়। তবে এবার আগাম বৃষ্টির কারনে মার্চ মাসেই পান উত্তোলন শুরু হয়েছে। সাধারণত মার্চ আর এপ্রিলে গাছে পান থাকে না তাই পুঞ্জির লোকজন বেকার হয়ে পড়েন। এবার সেই অবস্থায় পড়তে হচ্ছে না খাসিয়া পান পুঞ্জির বাসিন্দাদের। এসব পান পুঞ্জির বাসিন্দারা অধিকাংশ হচ্ছেন খাসিয়া(খাসি) সম্প্রদায়ের। এর বাইরে কিছু গারো পরিবার আছে। তাদের উৎপাদিত পান স্থানীয়ভাবে খাসিয়া পান নামে পরিচিত।
প্রথা অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পানের ‘লংখং’ বা গাছের সম্পূর্ণ পান উত্তোলন শেষ হয়ে যায়। মার্চ এপ্রিল এ দুই মাস গাছে পান থাকে না এসময় পান পুঞ্জিগুলোতে পান উত্তোলনের কোন কাজ থাকেনা।এ দুইমাস পান চাষিরা সাধারণত বেকার সময় কাটাতে হয়। তারা এ সময়টি আর্থিক সংকট পার করেন। কিন্তু এবার আগাম বৃষ্টিপাত হওয়ায় পান গাছে আগাম পান চলে এসেছে। এতে পান উত্তোলন বেশীদিন বন্ধ থাকেনি। জেলার প্রায় সব পান পুঞ্জিতেই ‘লবর’ বা নতুন পান উত্তোলন শুরু হয়েছে। যে সব পুন্জিতে সেচ সুবিধা আছে, সেচ দেওয়া হয়েছে সেগুলোতে পানের পরিমান বেশী এসেছে। আগাম পান আসায় পান চাষীরা বাজারে পানের দামও ভালো পাচ্ছেন।
পানের মৌসুমে যেখানে পানের আকার বড় থাকে তখন এক বিড়া (১৪৪) বা কান্তা তখন পানের দাম মেলে ২০ থেকে ৩০টাকা। আর এখন পানের আকারও ছোট মৌসুমের মতো অতটা বড় না এক বিড়া(কান্তা) পানের দাম মিলছে ১২০টাকা। এতে পান চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। যে সময়টিতে আর্থিক সংকটে থাকার কথা সেই সংকটে পড়তে হচ্ছে না খাসিয়া পান চাষিদের।
এ ব্যাপারে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদক সাজু মারছিয়াং বলেন, এবার আগাম বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলার ছোটবড় সব পুন্জিতেই কমবেশি নতুন পান উত্তোলন হচ্ছে। এ পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে তাই সরকারী আর্থিক সহায়তা পেলে খাসিয়া পান চাষীরা আরও লাভবান হতে পারতেন।
শ্রীমঙ্গল পান ব্যবসায়ী নিখিল দেবনাথ  বলেন, পাইকারী ব্যবসায়ীরা পুঞ্জি থেকে এসব পান ক্রয় করে নিয়ে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন খোলাবাজারে বিক্রি করেন। আর কিছু ব্যবসায়ী ওই পান ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। ইংল্যান্ড প্রবাসী সিলেটিদের কাছে খাসিয়া পানের কদর বেশী। এছাড়াও আমেরিকা, ইউরো ও মধ্যপ্রাচ্য খাসিয়া পান রফতানি হচ্ছে। খাসিয়া পান পাতা একটু ভারি হওয়ায় এবং সহজেই পচন হয় না বলে এই পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে৷