বঙ্গবন্ধুর আদর্শেই শিশুদের সার্বিক বিকাশের মাহাত্ম্য অন্তর্নিহিত

বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের আপামর জনগন যেন এক সুতোয় গাঁথা। বাঙালির স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার রূপকথায় বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির বার্তা আনার এক দিগ্বীজয়ী উপাখ্যান কিংবা বাঙালির আজন্ম লালিত সিংহপুরুষের নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ছাত্র আন্দোলনের মুখ বারতায় বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন পুরো বিশ্বের এক নন্দিত মহাপুরুষ। সেজন্যেই হয়তো কিউবার মহান বিপ্লবী নেতাও বঙ্গবন্ধুকে দেখে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি’।
সেই শিশু বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন বাংলার দুঃখী মানুষের সোচ্চার কন্ঠস্বর। একবার স্বদেশী আন্দোলনে যখন ব্রিটিশ শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে বাংলায় বিক্ষোভ খুব চড়াও হয়েছিলো সেসময়ে কিশোর বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন পুলিশদেরকে লক্ষ্য করে সে দাঙ্গায় ছোড়া ইট-পাটকেল আর অদম্য সাহসিকতা দেখে তৎকালীন পুলিশ বাহিনী হতবাক ও বিস্মিত হয়েছিলো। ১৭ই মার্চ ১৯২০ সালে বাংলার মায়ামাখা অঞ্চলে সেই গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার মধুমতীর তীরে বাংলার কোল আলো করে এসে বঙ্গবন্ধু যেন বাঙালির শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিলেন। যে অস্তিত্ব পরবর্তী সময়ে পুরো বাঙালি জাতির অস্তিত্বে রূপান্তরিত হয়েছিলো।
১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী এবং একই সাথে আমাদের জাতীয় জীবনের তল খুঁজে পাওয়ার দিন। দিনটি এখন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও বাংলাদেশ সরকার উদযাপন করে। বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্খার জন্য যে বঙ্গবন্ধু নিজেকে গড়েছিলেন তার সময়ের সুর কিন্তু সেই শিশুকালেই অনুরণিত হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীনচেতা ছিলেন ঠিক তেমনি তিনি শিশুদের খুব আদর যত্ন করতেন। এমনকি তিনি শিশু, বৃদ্ধ, আবাল বনিতা থেকে শুরু করে প্রকৃতিরও এক অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন।সেজন্যেই হয়তো পশু পাখির প্রতিও ছিলো তাঁর অগাধ মমত্ববোধ। বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার আবেশ যাঁর রুদ্রকন্ঠে ঝরেছিলো, সেই বঙ্গবন্ধুই কিন্তু আমাদের আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের পাথেয়।
আজকের দিনে সেই বঙ্গবন্ধুরই নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিশুদের বিকাশ, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর৷ সময়ে সময়ে বঙ্গবন্ধু যেই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগকে, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং স্বাধীনতার সৌকর্যের পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগে রূপান্তর করেছিলেন সেই ছাত্রলীগই কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অন্তরের সুর হয়ে যুগের পর যুগ ধরে বাঙালির অধিকার আদায়ের আধিকারিক হয়ে বিরাজমান হয়েছে।সেই ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৬২’এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’এর ছয়দফা, ৬৯’ এর গণঅভ্যুত্থান এবং এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধেও ১৭ হাজার নেতাকর্মীর আত্মবলিদানের মাধ্যমে বাঙালিকে স্বাধীনতার স্বাদ এনে দেয় আজকের এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক লড়াইয়ের সংগঠন বঙ্গবন্ধুকে সেই ৭৫’ এর আগস্টের কালো রাতে নৃশংসভাবে হত্যার পরেও সময়ে সময়ে দিকে দিকে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ প্রকম্পিত করেছে। আজকের দিনে ছাত্রলীগের একজন অন্তপ্রাণ কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও শিশু দিবসকে সামনে রেখে আমাদের প্রত্যয় হবে অনাগত যে প্রজন্ম সেই প্রজন্মের জন্য আজকের সকল শিশুর শিক্ষাকে সহজলভ্য করা, তাদের মৌলিক সকল চাহিদা নিশ্চিতে সদা সোচ্চার থাকা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাও শিশু শিক্ষা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমপিও ভুক্তিকরণ, বিনামূল্যে বই বিতরণের মাধ্যমে আপামর জনগনের চাহিদা পূরণে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট হয়ে নবপ্রভার দ্বার উন্মোচন করেছেন।
আজকের বাংলাদেশকে আগামীর প্রজন্মের জন্য মসৃণ রাখার দৃঢ় অভিপ্রায় নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা কাজ করছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে এসডিজি ও এমডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে তাড়া করবার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জনবান্ধব ম্যান্ডেট আগামীর বাংলাদেশের জন্য এক নতুন প্রভাতের সূচনা করবে বলে প্রশ্নাতীতভাবে আমরা আশাবাদী। পিতা মুজিবের আজন্ম লালিত স্বপ্ন শিশুর অবাধ বিকাশের নিশ্চয়তার মাধ্যমে আরও দিগ্বিজয়ী হয়েই প্রস্ফুটিত হবে। এদেশের জনগণ ভবিষ্যতে আরও প্রত্যাশিত এবং কাঙ্খিত একটি প্রজন্মের অপেক্ষায় থাকবে বলে ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে আমার এতটুকুই প্রত্যাশা।
লেখক – সাবিকুন্নাহার তামান্না, আহবায়ক কমিটির সদস্য, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ।
