3:27 AM, 13 November, 2025

মেয়ে বামনেত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বাবা হয়ে গেলেন রাজাকার

dr.-manisha-chakraborty

গেজেটেডধারী মুক্তিযোদ্ধা তিনি। গেজেটে তার ক্রমিক নম্বর ১১২। নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পান তিনি। তবে সদ্যঘোষিত রাজাকারের তালিকায় তিনি এখন ৬৫ নম্বর রাজাকার। এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীর বাবা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্ত্তী।

এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমারের বাবা এড সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তার সহধর্মিণী উষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নাম্বারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্ত্তীর মেয়ে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশালের সদস্য সচিব মনীষা চক্রবর্ত্তী ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে।
সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে।
আমার বাবা এড. তপন কুমার চক্রবর্ত্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ক্রমিক নং ১১২ পৃষ্টা ৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও পেয়ে থাকেন! আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৫ নাম্বার রাজাকার।

আমার ঠাকুরদা এড সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্থানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নাম্বারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য আমার রাজনীতি করার খেসারত দিতে হচ্ছে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। ধন্যবাদ আওয়ামীলীগ সরকারকে।

আমার দল বাসদ আমাকে শিখিয়েছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করাকে। মিছিল থেকে গ্রেফতার করে থানায় নির্যাতন করে ওরা বলেছিল যে আন্দোলন যেন না করি, নির্বাচনে যেন অংশ না নিই। রাজী না হওয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে অজামিনযোগ্য মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করেছে। আমরা জেল খেটেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি।

ভয় দেখিয়ে বা বিপদে ফেলে আমাদের কিছু করা যাবে না। অভুক্ত, অর্ধভুক্ত গরীব খেটে খাওয়া মানুষ আছে আমাদের দলের সাথে। আছে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী। অতীতের মতো আজ এবং আগামীতে আপনাদের পাশে পাবো সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’

এদিকে বরিশাল বাসদের আহ্বায়ক ইমরান হাবিব রুমন বলেছেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এমন গর্হিত কাজটি করা হয়েছে। ডা. মনীষার গোটা পরিবার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। কেবল রাজনৈতিক কারণে ওই পরিবারের মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘এটা হীন রাজনৈতিক চক্রান্ত। আমার বাবা গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ঠাকুরদাকেও পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে হত্যা করে।’ এরপরও তার বাবার ও ঠাকুরমার নাম রাজাকারের তালিকাভুক্ত করাকে দেশের জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

স্থানীয় রাজনীতিতে তার অবস্থানের কারণেই এমন হীন কর্মকাণ্ড করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ডা. মনীষা।