মানবতাবিরোধী মামলার আসামির সাথে গোপন আঁতাতের অভিযোগ উঠেছে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতা মেলায় শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্ইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দায়িত্ব থেকে তাকে অপসারণ করা হয়।

১১ নভেম্বর, সোমবার আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ হতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বলে ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি ওয়াহিদুল হকের মোবাইল ফোনে থাকা দুই অডিও রেকর্ডের কারণে ফেঁসে যান তুরিন আফরোজ।

রাজধানীর গুলশান থেকে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। ওই সময় তার মোবাইল ফোনটিও জব্দ করে পুলিশ। পরে সেটি পরীক্ষা করতে গিয়ে দুটি অডিও রেকর্ড পাওয়া যায়। ওই অডিওতে তার সঙ্গে তুরিনের যোগাযোগের তথ্য ছিল।

গুলাশান থানার ওসি অডিও রেকর্ড দুটি কপি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেন। পরে সংস্থা তা ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরকে দিলে তুরিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়। দুটি অডিওর মধ্যে একটি টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড। এটি চার মিনিটের মতো। অন্য অডিওটি ওই গোপন বৈঠকের, প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার মতো।

জানা যায়, আসামি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠক, মামলার নথি তার কাছে হস্তান্তর ও মামলার মেরিট নিয়ে কথা বলা- তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে এই তিনটি অভিযোগে তদন্ত হচ্ছিল।

অভিযোগের প্রমাণ ও অডিও রেকর্ড আইন মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তুরিন আফরোজকে ট্রাইব্যুনালের সব মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

আরো জানা গেছে, আসামি ওয়াহিদুল হকের মামলার প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান। গত বছর তদন্ত শুরু হওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর তুরিন আফরোজকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযোগ উঠে, ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তারের আগে গত নভেম্বরে তুরিন আফরোজ প্রথমে তাকে টেলিফোন করে দেখা করার সময় চান। এরপর একটি হোটেলে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেন তিনি।

তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়ক সানাউল হক জানান, তাদের টেলিফোনে কথা হয় গত বছরের ১৮ নভেম্বর। আর পর দিন ঢাকার অলিভ গার্ডেন নামে একটি রেস্তোরাঁর গোপন কক্ষে বৈঠকটি হয়। সেখানে তুরিন আফরোজ, তার সহকারী ফারাবি, আসামি ওয়াহিদুল হকসহ মোট পাঁচজন ছিলেন।

সানাউল হক আরো জানান, টেলিফোন রেকর্ডে তুরিন আফরোজ জানান যে তিনি বোরকা পরে ওই হোটেলে যাবেন। তার সঙ্গে থাকবে সহকারী ফারাবি, যাকে তিনি নিজের স্বামী পরিচয়ে সেখানে নিয়ে যাবেন।