বাবগঞ্জের বন থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় শ্রমিক উদ্ধার

নবাবগঞ্জ(দিনাজপুর)থেকে এম এ সাজেদুল ইসলাম(সাগর)
অপহরণ কারীরা সক্রিয় ফরিদপুর থেকে অপহরণ হওয়া শ্রমিক কে নবাবগঞ্জের বন থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল (২৯.০৮.২০১৯) তারিখ রাত এগারোটার সময় দিনাজপুরের পুলিশ সুপার বিরামপুর সার্কেলের এ এস পি মিথুন সরকার কে ফোন করে জানান ফরিদপুর জেলায় একটা অপহরণ হয়েছে এবং সেই ভিকটিম নবাবগঞ্জ থানা এলাকায় আছে তোমাকে সারারাত সময় দিলাম এর মধ্যে তাকে উদ্ধার করতে হবে। ফরিদপুর জেলার ওসি ডিবি তোমাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে।”ফরিদপুর থেকে নবাবগঞ্জ ,কাজ করার জন্য ডেকে এনে অপহরণ মুক্তিপণ দাবি অবশেষে উদ্ধার ফরহাদ ইসলাম ।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপহরণের ঘটনা বর্ণনা দিলেন এ এসপি মিথুন সরকার ,গতকাল (২৯.০৮.২০১৯) তারিখ রাত এগারোটার সময় হঠাৎ এসপি স্যার ফোন করে বললেন, “মিথুন ফরিদপুর জেলায় একটা অপহরণ হয়েছে এবং সেই ভিকটিম নবাবগঞ্জ থানা এলাকায় আছে তোমাকে সারারাত সময় দিলাম এর মধ্যে তাকে উদ্ধার করতে হবে। ফরিদপুর জেলার ওসি ডিবি তোমাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে।”ওসি ডিবি, ফরিদপুরকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম ফরহাদ ইসলাম(২৭), পিতাঃ মৃত আকরাম আলী, থানাঃ ফরিদপুর সদর, জেলাঃ ফরিদপুর সন্ধ্যার সময় থেকে নিখোঁজ এবং তার বর্তমান অবস্থান নবাবগঞ্জ থানার দাউদপুর ইউনিয়ন উনি আমাকে তিনটি মোবাইল নাম্বার দিলেন এবং ভিকটিমের ছবি। এই সামান্য তথ্য নিয়ে নেমে পড়লাম অভিযানে। সঙ্গী হলেন ওসি নবাবগঞ্জ, নবাবগঞ্জ থানার ফোর্স এবং আমার সার্কেল অফিসের তিনজন কনস্টেবল। প্রথমে মনে হয়েছিল উদ্ধার করতে পারবো না তবুও নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম, দেখা যাক কি হয় রাস্তায় প্রথমে দেখা হল দাউদপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল আজিম কে সঙ্গে নিয়ে সাথে আমাদের কাছে যে নাম গুলো ছিল সন্দেহের তালিকায় তাদের কাউকেই তিনি চেনেন না জানালেন। যে নাম্বার থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে সে নাম্বারে তাকে দিয়ে ফোন করালাম । উনার মাধ্যমে কিছুক্ষণ কথা বলিয়ে আমরা বোঝার চেষ্টা করলাম তারা কোন বাসায় আছেন? নাকি রাস্তায় এবং তাদেরকে একটি টোপ দেওয়া হল রাত বারোটা বেজে গেছে তাই বিকাশে টাকা দেওয়া সম্ভব না, তাদেরকে হাতে হাতে টাকা নিতে হবে। টাকা নেওয়ার জন্য তাদেরকে দাউদপুরে কোন একটি জায়গা নির্ধারণ করার জন্য বললাম। প্রথমে তারা রাজি হলেও পরবর্তীতে আসতে অপারগতা প্রকাশ করে। কিন্তু আমরা এর মাধ্যমে এতটুকু নিশ্চিত হলাম যে তারা আমাদের আশেপাশে আছে। আমাদের মনে আশার আলো জেগে উঠলো। শুরু করলাম চিরুনি তল্লাশি। আশেপাশের সকল রাস্তায় চেকপোস্ট বসালাম। সন্দেহজনক অনেকগুলো বাড়িত তল্লাশি করলাম। সারারাত অনেকগুলো বাড়িতে তল্লাশি করে যখন পেলাম না তখন মনে হল আশেপাশে কোন একটি জঙ্গলে হয়তো আসামিরা লুকিয়ে থাকতে পারে। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর আমাদের সন্দেহ সত্যি হলো হঠাৎ করে খেয়াল করলাম, শাল্টিপুর মুরাদপুর শালবনের মাঝখানে একটি টর্চের আলো। এত রাতে জঙ্গলের ভেতরে কারো থাকার কথা না। আমরা সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খেয়াল করলাম একটি সিগারেটের আগুন। আমাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেলাম এর মধ্যেই তারা আছে। আমরা যখন জঙ্গলে ভিতর এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমাদেরকে দেখে ওরা পালিয়ে যায় কিন্তু হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আমরা ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই।উদ্ধারের পর জানতে পারি ফরহাদ ইসলাম পাইলিং এর কাজ করেন। আজাদ নামের একটি লোক, যে তার ফোনে পরিচিত পাইলিং এর কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বগুড়া আসতে বলে।তিনি দুপুরের দিকে বগুড়া পৌঁছালে তাকে বলা হয় বগুড়া থেকে একটু সামনে অর্থাৎ গোবিন্দগঞ্জে কাজটি করতে হবে। গোবিন্দগঞ্জে এসে তিনি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেও সে লোকের কোন খোঁজ পাননি অপেক্ষা করার পর আজাদ তাকে বলেন আর একটি বাসে উঠতে যে বাসটি ভাদুরিয়া তে এসে দাঁড়াবে আসার পর তিনি কিছুটা বিরক্ত হন।কারণ তাকে বলা হয়েছিল বগুড়া কিন্তু আসতে হলো নবাবগঞ্জে। আসার পরে আজাদ নামক ব্যক্তি তাকে বললেন এখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে তাকে কাজ করতে হবে তার কথা মতো তার মোটর সাইকেলের চললে সে তাকে শাল্টি মুরাদ পুর জঙ্গলে কাছে নিয়ে আসে। পথমধ্যে তার সন্দেহ হলে সে বাথরুম করার নাম করে মোটরসাইকেল থেকে নামলে আরো ৪-৫ জন লোক এসে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং তাকে মোটরসাইকেলে তুলে জঙ্গলে ভিতরে নিয়ে যায় সেখানে তাকে অনেক নির্যাতন করা হয় এবং তার আত্মীয় জনের নাম্বারে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করা হয় এবং কতকগুলো বিকাশ নাম্বারে টাকা দিতে বলা হয় উল্লেখ্য যে পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল নয় তার পরিবারের পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় তারা পুলিশের শরণাপন্ন হন। পরবর্তীতে পাঁচ লক্ষ টাকা টাকার পরিবর্তে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন কিন্তু রাত্রি বারোটা বেজে যাওয়ায় বিকাশে টাকা পাঠানো সম্ভব হয়নি সেজন্য তাকে সহ্য করতে হয় অকথ্য নির্যাতন। তিনি অত্যন্ত গরীব পরিবারের একটি ছেলে ছোটবেলায় স্কুলের সামনে আমড়া, বাদাম বিক্রি করে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছন। নিজের খালাতো ভাইয়ের সহায়তায় শুরু করেছিলেন পাইলিংয়ের কাজ। মানুষকে বিশ্বাস করে কোন খোঁজ না নিয়েই কাজের সন্ধানে এসেছিলেন নবাবগঞ্জে এবং এখানেই তাকে অপহরণের শিকার হতে হল।অপহরণ হওয়ার পর তার পরিবারের লোকজন ভেবেছিলেন হয়তো তাকে জীবিত দেখতে পারবেন না। যখন তাকে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে আসি তখন তিনি বললেন, “ভাই আপনাদের সহায়তায় আজকে আমি দ্বিতীয় জীবন পেলাম, কাল সারারাত ওরা আমার সাথে যা করেছে তাতেও যে বেঁচে আছি তা আমার নিজের কাছে বিশ্বাস হচ্ছে না।ওসি ডিবি, ফরিদপুরকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম ফরহাদ ইসলাম(২৭), পিতাঃ মৃত আকরাম আলী, থানাঃ ফরিদপুর সদর, জেলাঃ ফরিদপুর সন্ধ্যার সময় থেকে। এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সামসুল আলম জানান ভিকটিম কে উদ্ধার করে তার ভাইয়ের নিকট দেওয়া হয়েছে। অপহরণের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
