নিজস্ব সংবাদদাতাঃ অজানা রয়ে গেছে উত্তরার দিয়াবাড়ির একটি খাল থেকে অস্ত্র উদ্ধারের তিন বছর পরও এর রহস্য। কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা কারা, কী উদ্দেশ্যে এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এনেছিল।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, ‘অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি তদন্ত চলছে।’ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি তদন্ত করছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
২০১৬ সালের ১৮ জুন উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়বাড়ি খাল থেকে সাতটি কালো ব্যাগের ভেতর থেকে ৯৫টি সেভেন ৭.৬২ এমএম পিস্তল, ২টি ৯ এমএম পিস্তল, ৪৬২টি ম্যাগাজিন (২৬৩টি এসএমজির), ১০৬০ রাউন্ড গুলি, ১০টি বেয়নেট, ১৮০টি ক্লিনিং রড ও ১০৪টি স্প্রিংযুক্ত বাক্স উদ্ধার করা হয়। ১৯ জুন একই খাল থেকে আরও তিনটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। ব্যাগে ছিল এসএমজির ৩২টি ম্যাগাজিন ও ৮টি ক্লিনিং রড। ২৫ জুন একই এলাকার অন্য একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয় আরও তিনটি ব্যাগ। তাতে পাঁচটি ওয়াকিটকি, দুটি ট্রান্সমিটার, দুটি ফিডার ক্যাবল, ২২টি কৌটা (যার মধ্যে ছিল আইসি, ট্রানজিস্টার, ক্যাপাসিটার ও সার্কিট), সাত প্যাকেট বিস্ফোরক জেল, ৪০টি পলিথিনের ব্যাগে থাকা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম এবং ৩২৫টি রুপালি ও সবুজ রঙের স্প্রিংযুক্ত বাক্স ছিল। এছাড়া আরো কিছু ইলেট্রিক ডিভাইসও উদ্ধার করা হয়।
অস্ত্র উদ্ধারের এক সপ্তাহ পরই হলি আর্টিজানে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তবে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর সঙ্গে জঙ্গিদের ব্যবহৃত অস্ত্রের মিল নেই বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তারা জানান, জঙ্গিদের কাছে এ পর্যন্ত যত অস্ত্র পাওয়া গেছে, তার বেশিরভাগ অস্ত্রই পাশের দেশ থেকে আনা। যেগুলো মূলত ফরেন আর্মস বা ইমপোর্টেড আর্মস না। জঙ্গিদের কাছে পাওয়া অস্ত্রগুলো সাধারণত লেদ মেশিনে বানানো এবং নিম্নমানের।
সিটিটিসির এডিসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দুয়েকটা ক্ষেত্রে আমরা জঙ্গিদের কাছে একে-২২ রাইফেল পেয়েছি, যে ধরনের অস্ত্র হলি আর্টিজানের ঘটনায় ব্যবহার করা হয়। একটি একে-২২ বগুড়ায় মসজিদে হামলার পর কমলাপুর রেলস্টেশনে পাওয়া যায়, এর বাইরে আরেকটি একই ধরনের অস্ত্র চট্টগ্রামে পাওয়া যায়। এর বাইরে জঙ্গি আস্তানাগুলোতে ইন্ডিয়ান অস্ত্র ছাড়া অন্য কোনো বিদেশি অস্ত্র পাওয়া যায়নি। কিন্তু, দিয়াবাড়ির খালে পাওয়া অস্ত্র বিদেশি ও উন্নতমানের।’
এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পর ঢাকা মেট্রোপলিট পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, ‘এটি কোনো সাধারণ অপরাধীর কাজ না। যারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন ২০-তে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া যারা ভণ্ডুল করতে চায়−এটা তাদের কাজ।’
ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন ও সরকারের দায়িত্বশীলরা এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারকে নাশকতার পরিকল্পনা বললেও কারা এই পরিকল্পনা করেছিল, তা তিন বছরেও বের হয়নি। পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্রগুলো উদ্ধার হওয়ার কারণে মামলা হয়নি। তুরাগ থানায় তখন তিনটি পৃথক সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। এই তিনটি সাধারণ ডায়েরি ধরেই তিন বছর ধরে তদন্ত চলছে।
বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসি’র স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের এডিসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কারা রেখে গিয়েছিল, তা জানা যায়নি। কারা রেখে গেছে, সেটা জানার জন্য আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি। পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্রগুলো পাওয়ার পর আমরা সব দিক থেকেই চেষ্টা করেছি। আমরা কাউকেই পাইনি, যাকে সন্দেহ করা যায়।’
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম