আশরাফুল ইসলাম
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার অস্ত্র মামলায় দুটি ধারায় হত্যাকান্ডের মুল আসামি জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি (অব:) কর্ণেল আব্দুল কাদের খানকে অস্ত্র আইনের ১৯এ ধারায় অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে যাবজ্জীবন এবং ১৯এফ ধারা অবৈধ গোলাবারুদ রাখার দায়ে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। এই মামলার চার্জশীটে শুধু কাদের খানকেই আসামি করা হয়েছিলো।
১১ জুন মঙ্গলবার ১নং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল কোর্টের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক আসামী ডাঃ আব্দুল কাদের খানের উপস্থিতিতে ১১ পৃষ্ঠার এই রায় ঘোষণা করেন। উলে¬খ্য, লিটন হত্যাকান্ডের মূল মামলাটি আদালতে এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
এই মামলা সুত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকেই পুলিশ খুনের হুকুমদাতা প্রধান আসামি কাদের খানের গ্রামের বাড়ি সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি গ্রামের খানপাড়ার বাড়িতে এমপি লিটন হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত পিস্তলসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে তৎপর ছিল। পরে ২৩ ফেব্রæয়ারি রাতে তার বাড়ীতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এসময় কাদের খানের দেখানো মতে আমগাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে অস্ত্র ও ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, মাটির নিচ থেকে উদ্ধারকৃত পিস্তল ও ম্যাগজিন এবং গুলি গুলো লিটন হত্যার পর মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এসময় ওইদিন আদালত থেকে এমপি লিটন হত্যা মামলায় তাকে প্রথম ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। রিমান্ডের চারদিনের মাথায় এমপি লিটন হত্যা ঘটনায় নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
উলে¬খ্য, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহবাজ মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় লিটনের বোন তাহমিদা বুলবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে ১ জানুয়ারি সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনার মুল পরিকল্পনাকারি হিসেবে গত ২১ ফেব্র“য়ারি বগুড়া থেকে কাদের খাঁনকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২২ ফেব্র“য়ারি লিটন হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয় এবং তার রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। রিমান্ডের চতুর্থ দিনে কাদের খাঁন আদালতে ১৬৪ ধারায় লিটন হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। এরপর থেকে কাদের খাঁন গাইবান্ধা কারাগারে আছেন।
প্রসঙ্গত উলে¬খ্য যে, এমপি লিটন ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহবাজ মাস্টারপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন। পরবর্তীতে সুনির্দিষ্টভাবে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়। ওই চার্জশীটে কাদের খান হুকুমদাতা হিসেবে প্রধান আসামি করে তার কিলার বাহিনীর সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে রানা, শাহীন মিয়া শান্ত, রাশেদুল হাসান মেহেদী, ব্যক্তিগত সহকারি (পিএস) শামছুজ্জোহা সরকার, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক চন্দন কুমার রায়, তার ভগ্নিপতি কসাই সুবল চন্দ্র রায়, কাদের খানের গাড়ি চালক আব্দুল হান্নানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে চন্দন কুমার রায় ভারতে পলাতক রয়েছে। অন্যান্যরা সকলেই জেলহাজতে আটক রয়েছে।
এই অস্ত্র মামলার রায়ে এমপি লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি ও মামলার আইনজীবি পিপি শফিকুল ইসলাম শফিক সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে কাদের খানের আইনজীবি সাবেক পিপি জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ এই রায় অন্তোষ প্রকাশ করে জানান, তারা উচ্চতর আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম