গণপূর্তের জমিতে মার্কেট করে ভাড়া নিচ্ছেন আ.লীগ নেতারা

বরিশালে গণপূর্ত বিভাগের জমি দখল করে সেখানে মার্কেট বসিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান। সেই মার্কেটের ভাড়া বাবদ লাখ লাখ টাকা নিজেদের পকেটে পুরছেন সেই আওয়ামী লীগ নেতারা। আর এসব দেখেও যেন দেখছেন না গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। সমকাল’র এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, বরিশাল নগরীর উপকণ্ঠ চরবাড়িয়ার তালতলী বাজারে গণপূর্ত বিভাগের সাড়ে ৮ একর জমি দখল করে মার্কেটটি তৈরি করা হয়। সেখানে পর্যায়ক্রমে শতাধিক আধাপাকা স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দেয়া হয়েছে বিভিন্ন জনের কাছে। গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর যোগসাজশেই কোটি কোটি টাকার এ জমি বেহাত হয়েছে বলে অভিযোগ।
আর এ জমি দখলের নেতৃত্বে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চরবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন সুরুজ ও তার ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান সুরুজ কোনো কথা বলতেই রাজি হননি।
বরিশাল নগরীর সদর রোড থেকে সড়কপথে ৬ প্রায় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তালতলী বাজার। তালতলী নদীর তীরেই গণপূর্ত বিভাগের সাড়ে ৯ একর জমি। নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার চরবাড়িয়া মৌজার ৪১নং জেএল ৩নং খতিয়ানের (দাগ নং ১৭৭, ১৭৮, ১৮১, ২৪৪, ২৪৫ ও ২৪৬) সাড়ে ৯ একর জমির মালিক গণপূর্ত বিভাগ। তার মধ্যে এক একরের মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। বাকি সাড়ে ৮ একর জমির পুরোটাই অবৈধ দখলদারদের খপ্পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ৯ একর জমির মধ্যে ৫ একেই ইউপি চেয়ারম্যান সুরুজের দখলে। তিনি সেখানে বালু ভরাট করে মাছবাজার ও আধাপাকা স্থাপনা তুলে ভাড়া দিয়েছেন। তার মালিকানায় আছে অর্ধশত দোকানঘর ও বালুর খলা।
লাগোয়া পুকুর ও নিচু জমি ভরাট করে দখল করেছেন চেয়ারম্যানের ভাই গোলাম কবির, যেখানে রয়েছেপ্রায় দুই একর জমি। সেই জমিতেও দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন তিনি, সেই সাথে তিনটি বালুর খলা করে একটি নিজে চালাচ্ছেন, অন্য দুটি ভাড়া দেওয়া।
এছাড়া গণপূর্তের জমিতে থাকা ৩টি পুকুরের আড়াই একর জমি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার ফিরোজ গাজীর দখলে। যদিও এ জমি লিজ নেওয়া বলে দাবি করেন তিনি।
গতকাল ১ নভেম্বর, শুক্রবার তালতলী বাজারে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই জমিতে থাকা স্থাপনাগুলো চেয়ারম্যান সুরুজ ও তার লোকজনের। তবে চেয়ারম্যানের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাননি কেউ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক ব্যবসায়ী জানান, সব জমি চেয়ারম্যান ও তার স্বজনদের দখলে। তিনিই গণপূর্তের স্থানীয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এ জমি দখল করেছেন।
এসব নিয়ে আলোচনার মুখে বরিশাল গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী অলিবার গুদা দাবি করেন, তালতলী বাজারে বেদখল জমির বিষয়টি অনেক আগে থেকেই গণপূর্তের ঊর্ধ্বতন দপ্তরে জানানো হয়েছে। দখলদার উচ্ছেদে কোনো নির্দেশনা আসেনি। মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলে জমি দখলমুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন ৫২ জন দখলদারের তালিকা করে জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে।’
তবে গণপূর্তের ৫২ জন দখলদারের তালিকা প্রসঙ্গে অনুসন্ধানে জানা গেছে ভিন্ন তথ্য। ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এ প্রসঙ্গে জানান, ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের দখলদার দেখিয়ে তালিকা বানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। যে তালিকার পেছনের কলকাঠিও নেড়েছেন সুরুজ চেয়ারম্যানই!
তবে এ ধরনের কোনো তালিকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। তিনি কোনো তালিকা পাননি বলে জানান।
তার ভাষ্য, সরকারি জমি দখল হলে উচ্ছেদের ব্যাপারে সংশ্নিষ্ট দপ্তরকে উদ্যোগী হতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসন উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেবে।
