হোসেনপুরে ডাক্তারের দায়িত্বের অবহেলায় যুবকের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতাঃ কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অবহেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর জের ধরে রোগীর আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী হাসপাতাল ঘেরাও করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার গ্রামের মগবুল ব্যাপারি বাড়ির মোঃ রতন মিয়ার বড় ছেলে কুয়েত প্রবাসী মানিক মিয়া(৩০) সোমবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। তার অবস্থার অবনতি হলে রোগীর সঙ্গে যাওয়া স্বজনরা ডাক্তারের কাছে ছুটে যান। কিন্তু তখন অটিজম দিবসের অনুষ্ঠান চলছিল হাসপাতালে। তারপরও রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবদুল্লাহ আল শামীমের সঙ্গে দেখা করে রোগীর সর্বশেষ অবস্থা জানান। স্বজনরা জানান, তখন ওই চিকিৎসক রোগীর কাছে না গিয়ে অনুষ্ঠানস্থলেই একটি ব্যথানাশক ওষুধ লিখে দেন। পরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মানিক মিয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং বেলা দেড়টার দিকে তিনি মারা যান।
মানিকের চাচাতো ভাই মোঃ জসিম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ভাইটা কোন কিছু বুঝার আগেই সংসারের হাল ধরতে কুয়েত চলে গেছিলো।১৩ টা বছর সে কুয়েত কাটিয়ে মাত্র একবছর হলো দেশে আইছে।৫-৬ মাস হলো নতুন বিয়ে করছে সে। আমার ভাই দেশের আলো বাতাসও ঠিকমতো গায়ে লাগাইতে পারেনাই তার আগেই সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।এই সবকিছুই হইছে শুধু ডাক্তারের গাফিলতির কারনে।তারা যদি আমার ভাইটারে একটা নজর দেখে একটু চিকিৎসা দিতো তাও মনটারে বুঝাইতাম।কিন্তু কয়েক ঘন্টায়ও আমার ভাইয়ের কাছে না আইসা নার্সরে দিয়া উল্ডা ফাল্ডা চিকিৎসা করাইছে।এরা ইচ্ছা করে আমার ভাইটারে মারছে, এরা ডাক্তার না এরা খুনী আল্লাহ এদের বিচার করবো।
মানিকের চাচাতো ভাই হোসেনপুর বাজার নিউ ফ্যাশন মেলা গার্মেন্টস এর স্বত্বাধিকারী এস এম নাজমুল আলম পলাশ অভিযোগ করেন, তার ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা যখন খারাপ দিকে যাচ্ছিল, তখন তারা একজন ডাক্তার আনতে অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো ডাক্তার রোগীকে দেখতে যাননি। তারা অনুষ্ঠান নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। এ অবহেলাটুকু না হলে তার ভাই হয়তো বেঁচে যেতেন।
মানিকের চাচাতো চাচা,সৌদিআরব প্রবাসী ,সাংবাদিক এবি.এম. ফারুক অভিযোগ করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।কেন বার বার ফোন করেও ডাক্তার পাওয়া গেল না।তার মৃত্যুর জন্য একমাত্র ডাক্তাররা দায়ী।
হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাসিরুজ্জামান সেলিম বলেন, ওই সময় হাসপাতালে অটিজম দিবসের আলোচনা সভা চলছিল। তাই তখনই রোগীকে দেখতে যেতে পারেননি কোনো চিকিৎসক। তিনি দাবি করেন, কিন্তু ঘণ্টাখানিক পর চিকিৎসক গিয়ে যে ধরনের চিকিৎসা দেয়ার কথা সবই দিয়েছেন।
হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, হাসপাতালে বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লোকজনও কিছুক্ষণ পর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আমরা লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যাবস্থা নিব।
