নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশে যারা প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধ বিক্রি করেন তারা কেন গুঁড়ো দুধ কেনেন জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। ‘খাদ্যে বিষমুক্তকরণ কার্যক্রমে নিয়োজিতদের নিরাপত্তায় সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা তিনি এ মন্তব্য করেন।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওই আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আমাদের দেশে যারা তরল দুধ বিক্রি করেন আমরা গবেষণা করে পেলাম যে তারা গুড়া দুধ কেনেন, কিন্তু কেন? আমরা গবেষণায় পেয়েছি দুধের মধ্যে আখের চিনি। দুধে তো থাকার কথা দুধের চিনি, যেটার নাম ল্যাকটোজ। কিন্তু দুধে আখের চিনি কোথা থেকে আসলো। এটা আমরা ঠিক মিলাতে পারলাম না।’
অধ্যাপক ফারুক আরো বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের কাছে অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে দুধ কিনলাম, দুধের দাম অনেক বেশি। অথচ সেই দুধ পরিবহন খরচ দিয়ে, ট্যাক্স দিয়ে দেশে আসার পর আরো কমে কিনতে পাওয়া যায়। আমার কাছে সন্দেহ হয় ওই দুধ আর এইটা কি একই?’
দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার ভয়াবহতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশেষজ্ঞ ডক্টরদের হাতে শেষ অস্ত্র হিসেবে যে অ্যান্টিবায়োটিক ছিল, যেগুলো মানুষকে আইসিইউতে না গেলে দেয়া হয় না, সেগুলো আমরা প্রতিনিয়ত গরুর দুধের মাধ্যমে খাচ্ছি এবং আমাদের শরীরে সেগুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে যখন আমাদের এই অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার প্রয়োজন হবে, তখন এই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটা চার মাসের শিশু পেয়েছি, যার ওপরে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছিল না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সামনে মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে।’
তার সমালোচনার জবাবে অধ্যাপক ফারুক বলেন, ‘দুধ নিয়ে তার গবেষণার বিষয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বলছে যে আমি বিএনপি করি। দেখেন, এদেশে আমার জন্ম হয়েছে। এদেশের প্রতি আমার একটা দায় আছে, মানুষের জন্য আমার কিছু করার আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি যা করছি তা একান্তই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এবং আমি মনে করি বর্তমান সরকার এ বিষয়টি বুঝেছেন বুঝবেন। আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কথা থেকে। তিনি বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে উনি কাজ করবেন এবং তিনি বলেছেন খাদ্যে ভেজাল একটি দুর্নীতি।’
প্রসঙ্গত, ২৫ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানানোর পর শুরু হয় আলোচনা অধ্যাপক ফারুক। এরপর পরেই প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর তাদের ওই গবেষণা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।
অধ্যাপক ফারুকের গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর তাদের ওই গবেষণা নিয়েই প্রশ্ন তোলে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তা ও দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, এই গবেষণা দেশের দুগ্ধ শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক।
এরপর আবারো দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও বাজার থেকে ১০টি নমুনা নিয়ে সবকটিতেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার কথা জানান তিনি।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম