2:03 PM, 13 November, 2025

কুয়েত যেতে ভারতীয়দের চেয়ে ৮ গুণ বেশি টাকা দেন বাংলাদেশিরা

kuwait

নিউজ ডেস্কঃ প্রতি বছর কয়েক লাখ নাগরিক বিদেশে গিয়ে শ্রম দিয়ে ডালার পাঠান দেশে। যা দিয়ে সচল রয়েছে আমাদের অর্থনীতির চাকা। তবে দুঃখজনক হলেও, এই যোদ্ধারা অনেকেই নিজেদের জমিজমা বিক্রি করে বা ঋণ নিয়ে বিদেশে যেতে হচ্ছে। কারণ বিদেশ যাওয়ার যে খরচ তা মেটানো এই পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় এই চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

উদাহারণ হিসেবে কুয়েতকে ধরা যেতে পারে।

যে ভিসায় বাংলাদেশিদের কুয়েতে যেতে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। সেই একই ভিসায় ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা যান মাত্র ১ লাখ টাকায়। জাগো নিউজ’র প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে আসে।

এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ভিসার ধরন না বুঝে দালালদের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশিরা এতো টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া ভিসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণেও কুয়েতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন বাংলাদেশিরা।

সূত্র মতে, বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগ পাওয়ার কারণে বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে কুয়েত সরকার। ফলে সরকারিভাবে কুয়েতে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ রয়েছে। তবুও গত ৪ থেকে ৫ বছরে লামানার (বিশেষ অনুমতি) মাধ্যমে কুয়েতে প্রায় অর্ধলক্ষাধিকেরও বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন ভিসায় দেশটিতে গেছেন।

বর্তমানে কুয়েতে সরকারিভাবে শুধু আকদ হুকুমা নামে (১৮ নম্বর ) ভিসা চালু আছে। এই ভিসা দেশটির সরকার  বিনামূল্যে প্রদান করে। এ ভিসায় কাজ হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার। এর বেতন কুয়েতি ৬০ দিনার, যা বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ১৭ হাজার।

এই ভিসায় গেলে কুয়েতের মসজিদ, মাদরাসা ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ হয়। এছাড়া যাওয়ার দুই বছর পর যে কোম্পানির মাধ্যমে যাওয়া হয়, সেই কোম্পানির লোকদের টাকা দিয়ে অন্য সাইটে যাওয়া যায়। অথবা এ ধরনের ভিসায় একই ধরনের কাজে অন্য কোম্পানিতে যাওয়া যায়। বেতন-সুযোগ সুবিধা সব একই থাকবে।

এদিকে ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপালের নাগরিকরা শুধু ১ লাখ টাকায় ২ বছর মেয়াদি এই ভিসায় দেশটিতে যাচ্ছেন। কিন্তু কোম্পানির কিছু কর্মকর্তা ও ভিসার দালালরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার কথা বলে বাংলাদেশিদের কাছে এই ভিসায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা নিচ্ছে।

জানা যায়, দালালরা পার্টটাইম জবের কথা বলে বেতনের চেয়ে ভালো আয় করার সুযোগ ও সময় থাকে, এমন লোভ দেখানো হয় বাংলাদেশিদের। এরপর এই ভিসায় যাওয়ার পর কেউ যদি অন্য কোথাও পার্টটাইম করতে গিয়ে ধরা পড়লে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা জানান, বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছে প্রতিটি ১৮ নম্বর শোন ভিসা দালালরা বিক্রি করছে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায়। আবার একই মূল্যে এসব ভিসাকে ফ্রি ভিসা বলে বিক্রি করেছেন তারা। যদিও বা ফ্রি ভিসা বলে কোনো ভিসা নেই।

এ বিষয়ে কুয়েতের লয় ফার্মের কেইস ম্যানেজার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে কুয়েতে সরকারিভাবে আকদ হুকুমা চালু আছে, যা কুয়েত সরকার বিভিন্ন কোম্পানিকে দিয়েছে। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা তাদের দেশের এজেন্সির মাধ্যমে এই ভিসায় ১ লাখ টাকা খরচ করে কুয়েতে আসছেন। বাংলাদেশিরা ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায় আসছেন। একই কাজে, একই বেতন, একই সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু বাংলাদেশিরা লালালদের খপ্পরে পড়ে বেশি টাকা দিচ্ছেন।’

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমাদের সরকার চেষ্টা করলে এজেন্সরি মাধ্যমে কুয়েত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষকর্মী পাঠাতে পারে, কম খরচে।’

তিনি আরো জানান, ‘উচ্চমূল্যে দালালদের কথায় ১৮ নম্বর ভিসার ধরণ সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে দেশ থেকে গত কয়েক বছরে আসা নতুন শ্রমিকরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যেকোনো দেশে যাওয়ার আগে ভিসার সর্ম্পকে ওই দেশে থাকা পরিচিত কেউ অথবা অবিজ্ঞ লোকদের কাছ থেকে জেনে নিলে এমন সমস্যা সম্মুখীন পড়তে হতো না।’

কুয়েতি ভিসার বিভিন্ন ভাগ আছে।

ফ্যামেলি ভিসা (২২ নম্বর) :

এই ভিসায় গিয়ে কোথাও কাজের জন্য আবেদন বা কাজ করা যায় না। টুরিস্ট ভিসা (১৪ নম্বর)। এই ভিসায় কাজ করার অনুমোতি নেই।

মাছনা ভিসা (১৮ নম্বর) :

মাছুরা সাগিড়া (১৮ নম্বর) হলো ছোট কোম্পানিতে কাজ করার ভিসা। বড় কোম্পানি বা অন্য কোনো ধরনের কোম্পানিতে এ ভিসায় কাজ করা যায় না।

খাদেম ভিসা (২০ নম্বর):  

রিলিজ দিলে এক কুয়েতির ঘর থেকে অন্য কুয়েতির ঘরে ভিসা লাগাতে হয়। অন্য কোথায়ও ভিসা পরিবর্তন করা যায় না।

মাজরা রায় শোন (১৮ নম্বর) :

এ ভিসায় খামার অথবা বাগানের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে কাজ করা যায় না। এটি অবৈধ ভিসা। এ ভিসায় গিয়ে চেকে পড়লে যেকোনো সময় গ্রেফতার করতে পারে স্থানীয় প্রশাসন।

আহলি (১৮ নম্বর) শোন:

এ ভিসায় গেলে কোম্পানির চুক্তির নির্দিষ্ট সয়ম শেষ হওয়ার পর অন্য যেকোনো কেম্পানিতে ভিসার লাগানো যায়।