মোঃতৌহিদুর রহমান তাহসিন, খুলনা প্রতিনিধিঃ
রামপালের ফয়লায় নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমানবন্দরের কাজ চলছে শম্বুক গতিতে। প্রায় দু’যুগ পার হলেও এখন পর্যন্ত বিমানবন্দর নির্মাণের মূল কাজ শুরু করেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তবে এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। এ অবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি এ বিমানবন্দরটির পুরোপুরি নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হয়ে বিমান চলাচল শুরু করবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। এতে হতাশ আর আশাহত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দাবির মুখে সরকার ১৯৯৬ সালে মোংলা বন্দরের অদূরে রামপালের ফয়লা এলাকায় সর্ট টেক অফ ল্যান্ডিং পদ্ধতিতে বিমানবন্দর চালু করতে ১০২ একর জমি অধিগ্রহণ করে। পরে রহস্যজনক কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে এই বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে পুনরায় বিমানবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে প্রকল্পটি পরিবর্তন করে ‘খানজাহান আলী বিমানবন্দর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৫ সালে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৯০ কোটি টাকা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৪ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। সে সময়ের (তৎকালীন) পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এই বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। একনেকে অনুমোদনের পরই জেলা প্রশাসন পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের জন্য নতুন করে ৫২৯ দশমিক ৮৫ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে। জমি অধিগ্রহণ শেষে ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট বাগেরহাট জেলা প্রশাসন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে বিমানবন্দরের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমি বুঝিয়ে দেন। এরপরও দৃশ্যমান তেমন কোনো বড় ধরনের কাজ হয়নি। রহস্যজনক কারণে শম্বুক গতিতে চলছে বিমানবন্দরটির নির্মাণ কাজ।
চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর গত মে মাসে বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। যা এখনও চলমান। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক রেজাউল হক বলেন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময় এক বছরের মধ্যেই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প হিসেবে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ কাজের মেয়াদ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত উল্লেখ করা রয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন স্থানীয় অধিবাসীরা। মোংলা নাগরিক সমাজের আহবায়ক মোঃ শেখ নূর আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখছি এখানে বিমানবন্দরের একটি সাইনবোর্ড সাঁটানো। কিন্তু কবে নাগাদ এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে বিমান চলাচল শুরু করবে তা আমরা জানি না। তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দরটি নির্মাণে ধীর গতির কারণে স্থানীয় জনসাধারণ হতাশ আর আশাহত হয়ে পড়েছেন।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও খুলনা চেম্বারের সদস্য আলহাজ এইচ এম দুলাল বলেন, প্রায় দুই যুগ ধরে ফেলে রাখা হয়েছে এ প্রকল্পকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। বিমানবন্দর নির্মিত হলে মোংলা বন্দর, সুন্দরবন, পর্যটন, ইপিজেড, চিংড়ি শিল্প ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে দ্রুত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ব্যবসায়ী নেতা সরকারের কাছে দ্রুত এ বিমানবন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানান।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, অধিগ্রহণের পর কর্তৃপক্ষের কাছে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে এবং এরই মধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আশাকরি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-১ শাখার উপ-প্রধান জাকিয়া আফরোজ বলেন, এরই মধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়েছে। পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।