12:35 AM, 13 November, 2025

সুলতানার স্বপ্ন পুড়ে ছাই

untitled-2_43

নিউজ ডেস্কঃ চার মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করবেন এই স্বপ্ন নিয়ে স্বামীর সঙ্গে রাজধানীর গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটে ক্রোকারিজ পণ্যের ব্যবসায় নামেন সৈয়দা রাবেয়া সুলতানা।

ছোট প্রতিষ্ঠানটি যখন ধীরে ধীরে দাঁড় করিয়ে ফেলেন, তখনই ঘটে সর্বনাশ। ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারির লাগা আগুন পুড়িয়ে ছাই করে দেয় সুলতানার সেই স্বপ্ন। চারদিকে নেমে আসে অন্ধকার। কিন্তু লড়াকু সুলতানা ও তার স্বামী মনির হোসেন দমে যাননি। দুজন মিলে আবারও স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। ঋণ নিয়ে ওই ডিএনসিসি মার্কেটে পুনরায় ব্যবসা শুরু করেন।

একদিকে চলতে থাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের কাজ, অন্যদিকে চলে চার মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলার প্রচেষ্টা। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর অপেক্ষায় রয়েছেন তার বড় মেয়ে। আগামী বছরই দেবেন এসএসসি পরীক্ষা।

মেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হয়ে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাবেন- এমন স্বপ্নে যখন বিভোর সুলতানা তখনই আবার পুড়ে ছাই হয়ে গেল তার স্বপ্নের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখন সংসার চালানো ও মেয়েদের পড়ার খরচ জোগানো তো দূরের কথা কীভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন সেই চিন্তাই কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে।

আগুনে সর্বশান্ত হয়ে ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে সাত বছরের ছোট মেয়ের হাত ধরে দিকভ্রান্তের মতো হাঁটছেন আর কান্নাকাটি করছেন তিনি। মার্কেটের পরিচিত কাউকে দেখলেই বিলাপ করে বলছেন, ‘কিছু নেই আর, যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে’।

তিনি বলেন, মার্কেটে ৩৬ স্কয়ার ফিটের একটি ক্রোকারিজের দোকান রয়েছে আমাদের। দোকান নম্বর ১৭। আগুনে দোকানের সব পণ্য পুড়ে কালো হয়ে গেছে এবং ভেঙে সব চুরমার হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের দোকান চালান আমার স্বামী মনির হোসেন। ২০১৭ সালের যখন এই মার্কেটে আগুন লাগে, সে সময়ও আমাদের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর ১২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আবার দোকানটি দাঁড় করিয়েছি। কিন্তু সর্বনাশা আগুন আবারও আমাদের সবকিছু শেষ করে দিল। দোকানে কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই।

‘এখন আমরা কীভাবে চলব। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব। মেয়েদের পড়ার খরচ কোথা থেকে জোগাড় করব। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম’- বিলাপ করে বলেন সুলতানা।

তিনি জানান, ডিএনসিসি মার্কেটে তার ভাই ও দেবরসহ আত্মীয়-স্বজনের ৫টি দোকান রয়েছে। সবগুলো দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ২০১৭ সালের আগুনেও আত্মীয়-স্বজনের দোকাগুলো পুড়েছিল।

সুলতানা বলেন, সকালে আগুন লাগার সংবাদ শুনেই সঙ্গে সঙ্গে এখানে এসেছি। কিন্তু সেসময় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আমাদের ভেতরে যেতে দেয়নি। আমরা আমাদের দোকানের কিছুই বাঁচাতে পারিনি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।

শনিবার (৩০ মার্চ) ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে মার্কেটের কাঁচাবাজারের পূর্ব পাশে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *