গাইবান্ধার এ দুখিনী বৃদ্ধা মায়ের নিদারুন অভাব পড়বে কি কারো চোখে?

আশরাফুল ইসলাম
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
দিনটি ছিল গত শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে চলছিল দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে এক আলোচনা সভা।
এ উপলক্ষে আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি আলোচনা শোনার জন্য আশেপাশের গ্রাম থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য নর-নারী। সাথে আসেন ৭৬ বছর বয়সি অভাগী এক বৃদ্ধা মা জমিলা বেওয়া। সবাই যখন অতিথিদের বক্তব্যে মনোনিবেশ তখন এই বৃদ্ধা মা জমিলা বেওয়া অতিথিদের সামনে দাড়িয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। ভারাক্রান্ত হৃদয় অশ্রæসিক্ত নয়ন কিছু বলবে বলবে ভাব। কাছে ছিল ভোটার আইডি কার্ড। ভেবেছিলেন, আজ এখানে বড় অফিসার আছেন। তার সঙ্গে দেখা করে আকুতি জানাবেন একটি বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতার জন্য। কথায় আছে অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়। আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা সবাই আসন ছেড়ে উঠে আসলেও বৃদ্ধা মা জমিলা বেওয়া কারো সরনাপন্ন হয়ে জানাতে পারেনি তার করুন আর্তি। বয়সের ভারে নুয়ে পরা এই বৃদ্ধা মা চলতে না পারলেও বুকভরা আশা নিয়ে লোকজনের ভীড়ে মাঝে এপাশ ওপাশ ঘুরতে থাকে। কিন্তু কে শুনেন কার কথা। কেউ বুঝতে চেষ্টা করেনি এই বৃদ্ধা মায়ের করুণ কাহিনী। এক পর্যায়ে সাংবাদিক টিমের দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কান্না বিজরিত কন্ঠে বলেন, বাবা বয়স ৭৬ চলছে। দেশ স্বাধীনের পর স্বামী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। রেখে গেছেন ২ মেয়ে ১ ছেলে। সবার বিয়ে হয়েছে। নিজের মাথা গোজার ঠাঁই নেই। ছেলের বাড়ীতে ঘরের বারান্দায় রাত কাটি। ২ মেয়ে যা দেয় আর মানুষের সাহায্য নিয়ে বেঁচে আছি। বয়স ৭৬ পেরিয়ে গেলেও ভিজিডি দুরের কথা ভাগ্যে মেলেনি বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতার কার্ড। যাদের টাকা আছে তাদের কথা সবাই শোনে। টাকা নেই কেউ শোনেনা আমার কথা।
আক্ষেপ করে বলেন, বাবা মরার পর কি ভাতা পাবো? এমন প্রশ্ন অভিযোগের পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের জল মুছতে মুছতে ইফতারের একটি প্যাকেট হাতে বাড়ী ফিরে যায় ৭৬ বছর বয়সি এই বৃদ্ধা মা জমিলা বেওয়া। জানা গেছে, এই বৃদ্ধা মা জমিলা বেওয়া কুপতলা ইউনিয়নের কুপতলা গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডের মৃত আঃ সাত্তারের স্ত্রী। তার ভোটার আইডি নং-৯১৪২২৬৭৭৪০।
এব্যাপারে এ গ্রামের ইউপি সদস্য সামছুল হকের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি জানান এই ওয়ার্ডটি অনেক বড়। জমিলা বেওয়ার বাড়ীটি কোথায় খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। স্থানীয় সাংবাদিক নুরুল ইসলামসহ এলাকার কতিপয় ব্যক্তি জানান, জমিলা বেওয়া একজন গরীব মানুষ। বয়স চলছে ৭৬ বছর। আজ অবধি তার নামে বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি। বয়স হিসেবে তার নামে কার্ড বরাদ্দ দেয়া উচিত বলে তাদের মন্তব্য। এব্যাপারে তারা গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
