আশরাফুল ইসলাম
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি:
থামেনি তিস্তার ভাঙন। সেই ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। গতকাল বোরবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ি, ভাটি বোচাগাড়ি, পাচঁপীর খেয়াঘাট, বাঁধের মাথাসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন সাংসদ শামীম। পরে তিনি নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি পরিবারকে নিজস্ব তহবিল হতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন উপজেলা জাতীয় পাটির সহ-সভাপতি ও আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাপার চেয়ারম্যান প্রার্থী আহসান হাবীব খোকন, চন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফুল মিয়া, চন্ডিপুর ইউপি জাপার সভাপতি সাখাউল ইসলাম প্রমুখ। তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে আধাপাকা ইরিবোর ধান এবং চলতি মৌসুমের নানা প্রজাতের উঠতি ফসলসহ বসত বাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। ভাঙনের তৃতীয় দফায় গত এক মাসের ব্যবধানে শতাধিক একর ফসলি জমি ও শতাধিক বসত বাড়ি নদীগভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজারও একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষুসি তিস্তানদী এখন মরায় পরিনত হয়েছে। তিস্তার বুক জুড়ে এখন ধু-ধু বালুচর। পলি জমে তিস্তার মুলনদী একাধিক শাখায় পরিনত হয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় ওইসব শাখা নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। স্রোতের কারনে উজানের ভাঙনে তিস্তার বালু চরের সবুজের সমারহ ও বসতবাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। বর্তমানে তিস্তার চরাঞ্চলে ইরিবোর ধান, বেগুন, পিয়াচ, মরিচ, কুমড়াসহ নানাবিধ আধাপাকা ও উঠতি ফসলের সমাহার দেখা দিয়েছে। কিন্তু সর্বনাশা তিস্তা সেসব ফসল ঘরে তুলতে দিচ্ছে না। কথা হয় কাপাসিয়া ইউনিয়নের বোচাগাড়ি গ্রামের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন তিস্তার ভাঙনে চরাঞ্চলবাসি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ সময় নদী ভাঙার কথা নয়। অথচ গত তিন মাস থেকে দফায় দফায় নদী ভাঙন চলছে। যার কারনে কাপাসিয়া ইউনিয়নের প্রায় হাজারও বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। চরের মানুষ তরিতরকারির আবাদ করে ৬ মাস সংসার চালায়। কিন্তু এ বছর নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় কৃষকরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। তিনি আবও বলেন তার তিন বিঘা জমির ভুট্টা ও দুই বিঘা জমির আধাপাকা ইরিবোর ধান ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া এক বিঘা জমির বেগুন ক্ষেতের প্রায় বেশিভাগ নদীতে বিলিন হওয়ার পথে। কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান- নদী ড্রেজিং এবং খনন করা ছাড়া নদীভাঙন রোধ করা কোন ক্রমে সম্ভব নয়। কারন দীর্ঘদি ধরে পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে হলে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সোলেমান আলী জানান নদী ভাঙনের বিষয়টি তিনি জানেন। জেলা পানি উন্নয়ন বোডের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান নদীভাঙন রোধ একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। তবে নদী সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে গত ২০ মার্চ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি কুড়িগ্রাম হতে নৌ-পথে স্প্রিড বোর্ডে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং কাপাসিয়া ইউনিয়নের কছিম বাজার খেয়াঘাটে স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি পরিদর্শন করে গেলাম। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম