রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে নিহত উপপরিদর্শক (এসআই) নূর ইসলামের শেষ গন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঘটনার রাত সোয়া ১২টায় তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে নিজ কর্মস্থল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের পথে না গিয়ে রাজশাহীর তানোরের দিকে যাচ্ছিলেন। তবে তার কললিস্ট ধরে ওই পথে যাওয়া ও মৃত্যু রহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (৪ মার্চ) দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী-আমনুরা সড়ক হয়ে তানোরের দিকে যাচ্ছিলেন এসআই নূর ইসলাম। বিশ্বনাথপুর কাজীপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে তাকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে সময়ও তিনি জ্ঞান হারাননি বরং পুরোনো কর্মস্থল গোদাগাড়ী উপজেলার পরিচিত কিছু মানুষকে ফোন করে উদ্ধারের আবেদন জানান।
নিহত এসআই নূর ইসলাম এর মোবাইলের কললিস্ট দেখে পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, তিনি দুর্ঘটনার পর তার পরিচিত গোদাগাড়ী উপজেলার কিছু মানুষকে ফোন করেন। এ সময় তাকে উদ্ধারের জন্য তিনি ওই পরিচিত ব্যক্তিদের সাহায্য চান। তবে তাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই স্থানীয়রা এসআই নূর ইসলামকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, নূর ইসলাম একসময় গোদাগাড়ী থানায় কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি তানোর ও বাগমারা থানায় দায়িত্ব পালন করেন। বাগমারায় দায়িত্ব পালনকালে একটি নারী নির্যাতন মামলায় একপেশে ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে চার্জশিট দেন। এ ঘটনার প্রমাণ হলে পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হাসান তাকে শাস্তি হিসেবে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করেন। এক মাস আগে এসআই নূর ইসলামকে আবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জ মডেল থানায় পদায়ন করা হয়।
এক সপ্তাহ আগে তিনি বাসাবদল করার কথা বলে ছুটি নেন। গত শুক্রবার রাত সোয়া ১২টায় গোদাগাড়ী-আমনুরা সড়ক হয়ে তিনি তানোরের পথে যাচ্ছিলেন। এ থেকে পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন। গভীর রাতে তিনি কেন তানোরের পথে যাবেন? পুলিশ এটাও বলছে, নূর ইসলামের কখনও ডোপ টেস্ট করা হয়নি। কারণ, মাদক সেবনের মতো কোনো উপসর্গ পুলিশের চোখে পড়েনি আগে। তবে নেশাগ্রস্ত না হলে তিনি এ পথে কেন গভীর রাতে যাবেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হাসান বলেন, বাগমারায় তিনি দায়িত্বে অবহেলা করে ক্লোজড হয়েছিলেন। তবে মানুষ হিসেবে খুব খারাপ ছিলেন না। কখনও নেশাগ্রস্ত বলেও মনে হয়নি। তবে রাত সোয়া ১২টায় তিনি নিজ কর্মস্থলের পথে না গিয়ে তানোরের পথে কেন যাচ্ছিলেন? এ নিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই তার ফোনের কললিস্ট ধরে তদন্ত করা হচ্ছে।’
তিনি জানান, নিহত নূর ইসলামের পরিবার ময়নাতদন্ত করতে আপত্তি জানিয়েছিল। তাই ময়নাতদন্ত না করেই লাশ তার পরিবার গ্রামের বাড়ি যশোরে নিয়ে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় সড়ক দুর্ঘটনার আইনে মামলা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত চলছে।
সম্পাদক: শামীম আহমেদ, নির্বাহী সম্পাদক: এস এম মিজানুর রহমান মামুন, প্রকাশক: রাজন আকন্দ
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দেশেরবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম