5:04 AM, 13 November, 2025

ঠাকুরগাঁওয়ে আলুতে কৃষকের চেয়ে বেশি লাভবান মধ্যস্বত্তভোগী, ব্যবসায়ী ও ফরিয়ারা

received_657446805540809

ইতিমধ্যে কোল্ড ষ্টোরেজগুলোতে আলু সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। জেলার কোল্ড ষ্টোরেজগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের পাশাপাশি ফরিয়া, মধ্যস্বত্তভোগী ও ব্যবসায়িরা আলু সংরক্ষণে ভীড় জমিয়েছেন। তারা কৃষকের কাছে ৫০ কেজির বস্তায় দেড় থেকে ৩ কেজি আলু ‘ধলতা’ হিসেবে বেশি নেন। মৌসুম শেষে আলু বিক্রি করে অতিরিক্ত আলু থেকে কোটি টাকা মুনাফা হয় বলে জানা যায়। জেলায় মোট ১৫-১৬টি কোল্ড ষ্টোরেজ রয়েছে। সরেজমিনে জেলার বেশ কয়েকটি ষ্টোরেজ ঘুরে জানা যায়, গত বছর ১৫ ষ্টোরেজে ২৬ লাখ বাস্তা আলু সংরক্ষন করা হয়। এ থেকে ২০-৩০ শতাংশ আলু বীজ হিসেবে ধরেও প্রায় ২০ লাখ বস্তায় গড়ে ২ কেজি হারে ৪০ লাখ কেজি আলু ধলতা হিসেবে বেশি নেওয়া হয়। বিক্রির মৌসুমে (কেজি প্রতি ১৫ টাকা হিসেবে) যা থেকে মধ্যস্বত্তভোগী, ব্যবসায়ি ও ফরিয়ারা প্রায় ৬ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে। এর বদৌলতে বিনা পূজিতে অনেক ফরিয়ারা আলু কিনে তা ব্যবসায়িদের দিয়ে আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেছেন। এক সময় জেলায় একটি মাত্র কোল্ড স্টোরেজ থাকায় সেটিতে আলু সংরক্ষণে স্লিপ পাওয়া ছিল সোনার হরিন পাওয়ার মত। বেশিরভাগ স্লিপ চলে যেত কালোবাজারীদের হাতে। ফলে অনেক বেশি মূল্যে স্লিপ পেত কৃষকেরা। পরবর্তিতে শাহী হিমাগারের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা সহ আরো কয়েকজন ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কয়েকটি কোল্ড ষ্টোরেজ দেন এবং কৃষকদের নানাভাবে আলু উৎপাদনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। ফলে কৃষকেরা সংরক্ষনের সুবিধা ও সহযোগিতা পেয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে আলু চাষে এক বিপ্লব সাধিত হয়। যার সুফল কৃষক, আলু ব্যবসায়িসহ সকলেই পায়।

ঠাকুরগাঁওয়ের বেশ কয়েকজন কোল্ড ষ্টোরেজের মালিক জানান, কল্যাণ সমিতির অন্তরালে আলু নিয়ে জেলায় একটি সিন্ডিকেট পাটি তৈরী করা হয়েছে। যাদের কাজ কৃষকদের ব্যবহার করে নিজেদের লাভ করা। গত বছর থেকে কল্যাণ সমিতির লোকজন নতুন নিয়ম চালু করে। ঢাকা বা দেশের অন্যান্য জেলার ব্যবসায়ি বা ফরিয়ারা ঠাকুরগাঁও জেলায় তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে আলু কেনার সময় ধলতা হিসেবে ২-৩ কেজি আলু নেওয়া শুরু করে। সমিতির লোকজন বাধ্যতামূলক এটি ব্যবসায়ি ও ফরিয়াদের নিতে বাধ্য করেন। এতে করে অতিরিক্ত আলু থেকে লাভ কৃষক পায় না। জেলায় কিছু আলু বিক্রি হলেও এই সিন্ডিকেট পাটি বেশিরভাগ আলু দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠিয়ে দেয়।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আরাজী পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক নূর আলম বলেন, প্রতি বছর আমি কোল্ড ষ্টোরেজে ২ হাজারের মত বস্তা সংরক্ষণ করি। দাম কমলে ব্যবসায়িরা ১-৪ কেজি ধলতা নেয়। সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বাকুন্দা গ্রামের কৃষক নরেশ চন্দ্র রায় বলেন, কোল্ড ষ্টোরেজে ৫৮ বস্তা আলু সংরক্ষণ করলাম। এই আলু বিক্রির সময় ব্যবসায়িরা ২-৩ কেজি আলু ধলতা হিসেবে বেশি নিবে। ষ্টোরেজ মালিকগণ আমাদের কাছে ধলতা নেয়না।

এসবি কোল্ড ষ্টোরেজের ম্যানেজার দবিদুর রহমান বলেন, এ বছর আলু সংরক্ষণ শুরু হলেও গত বছরের চেয়ে কম কৃষক আলু রাখছেন। আলু বিক্রির সময় ফরিয়ারা বস্তা প্রতি ২-৩ কেজি আলু ধলতা হিসেবে বেশি নেন। আমরা চাই কৃষকেরা লাভবান হোক। মূলত কল্যাণ পাটির লোকজন এখানে সিন্ডিকেট তৈরী করেছে। অনেক সময় স্যাম্পল দেখার পর ২/১টি খারাপ আলু ঢুকিয়ে দিয়ে দাম কমিয়ে দেয়। এ জাতীয় কারনে কৃষকেরা অনেক সময় বাজারদরের থেকেও কম মূল্যে আলু বিক্রি করে দেয়।

ঠাকুরগাঁও আলুচাষী ও ব্যবসায়ি কল্যাণ সমিতির সভাপতি রমজান আলী জানান, দেশের অন্যান্য স্থানে ভাড়া কম থাকলেও ঠাকুরগাঁওয়ের কোল্ড ষ্টোরেজের মালিকগন ভাড়া ঠিকমত নেন না। জেলার কৃষকদের কাছ থেকে যাতে করে ভাড়া বেশি নিতে না পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সংগঠন এবং কৃষকের কাছ থেকে ষ্টোরেজে আলু সংরক্ষণ ও বের করার সময় কল্যাণ সমিতির চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও কোল্ড ষ্টোরেজ মালিক সমিতির সভাপতি মো: আব্দুল্লাহ জানান, ষ্টোরেজে ধলতা নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যে ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে তার থেকে বেশি নেওয়া হয় না বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, জেলায় এ মৌসুমে গত বছরের চেয়ে বেশি পরিমানে আলুর আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের যাবতীয় পরমর্শ প্রদান করা হয়েছিল। বর্তমানে জেলার কৃষক, হিমাগার মালিক ও কল্যাণ সমিতির সমন্বয়ের মাধ্যমে আলু ফসল থেকে জেলাবাসী উপকৃত হবে বলে মনে করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, কৃষি বিভাগের তথ্য মতে এ বছর জেলায় আলুর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৮ মেট্রিক টন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *