দেড় লাখ টাকায় রফা দফা পঞ্চগড়ে স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা মামলা

কাজী সাইফুল, পঞ্চগড়:
পঞ্চগড়ে স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে ভুক্তভোগি পরিবারকে চাপ প্রয়োগের এক পর্যায়ে গ্রাম্য শালিশের মাধ্যমে মাত্র দেড় লাখ টাকায় রফাদফা করেছে স্থানীয় মাতব্বররা। প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন সন্ধায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ডাবরভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া গ্রামের মইনুল ইসলামের মেয়ে মনিরা আক্তার (১৪) গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার পূর্বে তার লিখে রাখা দুইটি চিরকুট থেকে সনাক্ত করা হয় তার আত্মহত্যার প্ররোচক পার্শ্ববর্তী আমবাড়ী গোবরাপাড়া এলাকার গুলজার আলীর ছেলে মাহবুব আলম। সে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টে বর্তমান সৈনিক পদে কর্মরত। পরবর্তীতে প্ররোচনার আরো কিছু আলামতের ভিত্তিতে গত ০৪ জুলাই মৃত মনিরার বাবা হালুয়াপাড়া এলাকার মৃত- আব্দুর রহিমের ছেলে মইনুল ইসলাম বাদী হয়ে সেনা সদস্য মাহবুবকে আসামী করে বিজ্ঞ আমলী আদালত-১, পঞ্চগড় এ মামলা করেন।মামলার জি আর নম্বর ২৪৯/১৯ মামলার পর থেকেই মাহবুবের পরিবারের লোকজন ভুক্তভোগি পরিবারকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। এক পর্যায়ে গত ১৫ আগষ্ট ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম ও সাবেক সদস্য আব্দুল গফফারসহ স্থানীয় মাতব্বরদের উপস্থিতিতে মামলার বাদীকে ফুসলিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আপোষের কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। এবিষয়ে মামলার বাদী মইনুল ইসলাম বলেন, আমি পড়তে পারিনা, কাগজে কি লেখা ছিল আমি তা জানিনা, লোকজনের অত্যাচারে পরিবার নিয়ে বাড়িতে থাকতে পারিনা। আমাকে বলা হয়েছিল আপোষের কাগজে স্বাক্ষর করলে দেড় লাখ টাকা দেয়া হবে। আমি স্বাক্ষর করেছি। ইতোমধ্যে ২০ হাজার টাকা পেয়েছি বাকী টাকা মামলা তুলে নিলে পাবো।
দেড় লাখ টাকায় আত্মহত্যার মামলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আইনের প্রতি আঙুল তুলে বলেন দেড় লাখ টাকায় যদি একটা জীবনের দাম হয় তাহলে সমাজে ও দেশে এমন ঘটনা অহরহ ঘটবে।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু আক্কাছ ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা না বলায় তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন মোবাইল ফোনে জানান বাদী মামলা করেছে আপোষ ও করতে পারেন। আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলাটা কি আপোষ যোগ্য এমন প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা বিষয় টি এড়িয়ে যান। হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম দেড় লাখ টাকায় আপোষের বিষয়টি স্বীকার করেন।
