বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর, সেনাদের কাছে স্যাটেলাইট ফোন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পুরো বিশ্ব থেকেই কার্যত এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কাশ্মীর। ফোন, ইন্টারনেট এমনকি চিঠি সরবরাহও বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারত শাসিত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে পরিস্থিতি সামাল দিতে মোদি সরকার এই অবস্থা তৈরি করে রেখেছেন এ অঞ্চলে।
কাশ্মীরের বাইরে থাকা কাশ্মীরি জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা পরিবারসহ কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারছেন না। অন্যদিকে এই মুহূর্তে আসলে কি হচ্ছে সে তথ্য নিয়েও তৈরি হয়েছে গোলক ধাঁধা। জানা যাচ্ছে না সেখানকার পুরো পরিস্থিতির প্রকৃত রূপ। গণমাধ্যমে কি সব খবর উঠে আসছে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। রবিবার সন্ধ্যাতেই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগ।
এদিকে কাশ্মীরের জনগণকে সকল প্রকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হলেও সেখানে অভিযানে থাকা সেনা ও পুলিশ সদস্যরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। পুলিশের একাধিক সূত্র বলেছে, কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে স্যাটেলাইট ফোন ও বিশেষ মুঠোফোন সেট সরবরাহ করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ ধরণের স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার সুযোগ দিত যার ফলে তারা নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এবং আইন প্রণয়নের অধিকার রাখতো। বিজিপি সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিলো তারা ক্ষমতায় গেলে এই ধারা বাতিল করবেন। যার ফলে কাশ্মীর যে সায়ত্ব শাষনের মর্যাদা ও নিজস্ব স্বাধীন সত্বার চর্চার দাবি রাখতো তা আর রইলা না। এ কারণেই এই ধারা বাতিলের বিপক্ষে কাশ্মীরের জনগণ। একই সাথে ভারতের বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন, ব্যক্তিবর্গও এই অনুচ্ছেদ বাতিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
কিন্তু মোদি সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সব আয়োজন করতে ১১ দিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। কাশ্মীরের জনগণ যাতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে না পারে এ জন্য সেখানে অবস্থানরত নিয়মিত সেনাদের পাশাপাশি আরো বিপুল পরিমান সেনা মোতায়েন করা হয়। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজার সিআরপিএফ জওয়ান মোতায়েন করা হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনীর বোয়িং সি-১৭ গ্লোবমাস্টার উড়োজাহাজে করে এই জওয়ানদের সারা দেশ থেকে কাশ্মীরে নেয়া হয়।
এরপর রবিবার রাতে ১৪৪ ধারা জারি করে গৃহবন্দি করা হয় রাজনৈতিক নেতাদের। গ্রেপ্তার করা হয় কাশ্মীরের দুই প্রভাবশালী নেতাকে। মোবাইল, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। চিঠি বা কোনো প্রকার পার্সেল পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির সরকার।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের বিবিসি সংবাদদাতা আমির পীরজাদা সোমবার বিবিসির দিল্লির প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের অন্যান্য অংশে কী হচ্ছে তা কেউ জানে না – আমরা কারো সাথে কথাও বলতে পারছি না। মানুষ ভীষণ চিন্তিত – তারাও জানে না আসলে এখন কী হচ্ছে এবং কী হতে যাচ্ছে।’
কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত কাশ্মীরি ফরহাদ খুরশিদ বলেন, ‘যখন শেষ বার আমার মায়ের সাথে কথা হয় তখন আমার মা আমাকে বলেছিলো যে কোন সময় কাশ্মীরের সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবে তুমি চিন্তা করো না, আমরা অনেক কঠিন ও খারাপ সময় পার করেছি। এটাও কেটে যাবে…।’
কাশ্মীরের সর্বশেষ পরিস্থিতি যতটুকু জানা গেছে সেখানে এখানে এখন থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। পথে পথে ব্যারিকেড, চেকপোস্ট আর সেনা টহল। হাজার হাজার সেনা টহল দিচ্ছে এখন কাশ্মীরের রাস্তায়। আর কাশ্মীরে নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষেরা উৎকণ্ঠা নিয়ে জানতে চাচ্ছে কি হচ্ছে এখন কাশ্মীরে?
