ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়েছে ঢাকার বাহিরে

নিউজ ডেস্কঃ রাজধানী ছাড়িয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকই আগেই ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আর এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যুও সংখ্যাও বেড়েছে। গত রবিবার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত খুলনা, মাদারীপুরের শিবচর ও রংপুরে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
এছাড়া জয়পুরহাট থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ও ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে পাঠানো এক স্কুলছাত্রীও সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সমকাল’র এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে আসে।
খুলনা :
খাদিজা বেগম নামের একজনের ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ৭টার দিকে নগরীর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ নিয়ে জেলায় তিন দিনে তিনজন মারা গেলেন। খাদিজা বেগম বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের দুলু মোল্লার স্ত্রী।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এস এম আবদুর রাজ্জাক জানান, খাদিজা বেগম ৩ আগস্ট রাতে ‘ডেঙ্গু শক্ড সিনড্রোম’ নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি আগে থেকেই কিডনি ও হার্টের রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
এর আগে শনিবার রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্জিনা বেগম ও রবিবার ভোরে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মঞ্জুর শেখ নামের দু’জন মারা যান।
মাদারীপুর ও শিবচর :
মাদারীপুরের শিবচরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রিপন হাওলাদার নামের এক পোশাক শ্রমিক মারা গেছেন। সোমবার ভোরে উপজেলা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামের হাবিবুর হাওলাদারের ছেলে। ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ আগস্ট বাড়ি আসেন তিনি। একই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম রিপনের মৃত্যুতে নদীভাঙনের বাস্তুহারা হতদরিদ্র পরিবারটি চরম বিপদে পড়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন শফিকুল ইসলাম জানান, মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গত ১০ দিনে ৭৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ২৫ জন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
মিঠাপুকুর (রংপুর) :
রংপুরের মিঠাপুকুরে ডেঙ্গু জ্বরে চার বছরের শিশু তিষা মনির মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর তার মৃত্যু হয়। তিষা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর তেঁতুলবাড়ী গ্রামের তাহারুল ইসলামের মেয়ে। গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল পাইকার দীলিপ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মিঠাপুকুরে গত দু’দিনে চারজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তরা সবাই ঢাকা থেকে এলাকায় এসেছেন।
জয়পুরহাট :
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট পৌর শহরের শান্তিনগর মহল্লার বাসিন্দা শারমিন আকতার শাপলা (৩২) নামের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। শারমিনের স্বামী নাজমুল হক ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক।
ঢাকা থেকে গত মঙ্গলবার জয়পুরহাটে ফেরেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা শারমিন। শুক্রবার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছিলো। এর আগে গত ১২ জুলাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট সদর হাসপাতালে রায়হান আলী নামের একজনের মৃত্যু হয়।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল হোসেন জানান, সোমবার সকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালে ১২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। তাদের তিনজন সুস্থ ফিরে গেছেন। চিকিৎসাধীন আছেন সাতজন। অন্যত্র পাঠানো হয়েছে দু’জনকে।
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) :
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর স্কুলছাত্রী অথৈ সাহা সোমবার সকালে ঢাকার ধানমণ্ডির আনোয়ারা প্রাইভেট হাসপাতালে মারা গেছে। সে বোয়ালমারী পৌর সদরের কামারগ্রামের কানাই সাহার মেয়ে ও নিউ অলব্রাইট প্রি-ক্যাডেট স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। জ্বর নিয়ে গত রবিবার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকার আনোয়ারা প্রাইভেট হাসপাতালে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সিলেট :
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ওসমানী হাসপাতালে আরো ২২ রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত ৭ জুলাই থেকে সোমবার পর্যন্ত ১৩১ ডেঙ্গু রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ :
সোমবার পর্যন্ত মোট ৩১২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সোমবার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন। সেখানে মোট চিকিৎসাধীন ৮৬ জন। এ ছাড়া পাঁচজন ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের উপপরিচালক সুলতানা রাজিয়া জানান, রোগীদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পাবনা :
সদর হাসপাতালে সোমবার ৮ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ওই হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৩ জন। এ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৭ জন। তাদের কেউই মারা যাননি। তবে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু কিটের সংকটের কারণে বেসরকারি ক্লিনিকে ভিড় করছেন রোগী।
চকরিয়া (কপবাজার) :
কপবাজারের চকরিয়া উপজেলায় সোমবার পর্যন্ত ১৭ জন শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উপজেলা হাসপাতালে তিনজন, শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে সাতজন, মা, শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং জমজম হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ভোলা ও চরফ্যাসন :
চরফ্যাসনে সোমবার পর্যন্ত ২১ জন শনাক্ত হয়েছেন। রবি ও সোমবার আক্রান্ত ৬ জনকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের ঢাকা ও বরিশালের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পটুয়াখালী ও কলাপাড়া :
পটুয়াখালীতে রবিবার বিকেল থেকে ২৪ ঘণ্টায় সাতজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে তিনজন, বাউফল ও কলাপাড়া হাসপাতালে দুইজন করে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬০ হলো। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সদর হাসপাতালে খোলা হয়েছে ডেঙ্গু কর্নার।
ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৩ জন। তাদের মধ্যে রবিবার ১০ জন ও সোমবার ৬ জন ভর্তি হন। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৬৬। অন্যরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ :
চাঁপাইনবাবগঞ্জে রবিবার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত নতুন ১১ ডেঙ্গু রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ৪৯ জন। তাদের ১৯ জনকে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। রাজশাহী পাঠানো হয়েছে চারজনকে। সোমবার ভর্তি ছিলেন ২৬ জন। এ হাসপাতালে আলাদা ‘ডেঙ্গু কর্নার’ স্থাপন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) :
ফুলবাড়িয়ায় আরো দুজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা হলো ৩। আক্রান্তরা ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরেছেন। আগামী ঈদে ৫০ হাজারের বেশি গার্মেন্ট কর্মী ঢাকা থেকে এ উপজেলায় ফিরবেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত থাকতে পারেন আশঙ্কা করে প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
ঝালকাঠি :
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে ডেঙ্গু শনাক্ত পরীক্ষা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। এই হাসপাতালে চারজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের একজনকে বরিশাল পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া সোমবার পর্যন্ত গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় শনাক্ত হয়েছেন ১৬ জন। তাদের মধ্যে চারজনকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জেলার মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে কিট সংকটের কারণে তিন দিন ধরে বন্ধ আছে ডেঙ্গু পরীক্ষা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।
এদিকে, এভাবে মৃত্যুর ঘটনা বাড়তে থাকায় ডেঙ্গু রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একই সঙ্গে চলছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম। সারাদেশ প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানও চালাচ্ছে।
